Indian Railways : দীর্ঘদিন ধরে দাবি ছিল—কম না, আরও কোচ চাই! বাদুড়ঝোলা ভিড়ে নাকাল যাত্রীদের একটাই চাওয়া ছিল, ট্রেন যেন একটু বড় হয়। সেই দাবিরই এবার উত্তর এল রেলমন্ত্রীর মুখে। অশ্বিনী বৈষ্ণবের ঘোষণা অনুযায়ী, খুব শীঘ্রই ভারতীয় রেল চালু করতে চলেছে ১৬ কোচের নতুন লোকাল ট্রেন। আর এই ঘোষণার পর থেকেই শহর থেকে শহরতলি, সর্বত্র যাত্রীমহলে আশার আলো জ্বলেছে।
তেলঙ্গনায় তৈরি হবে নতুন কোচ
রেলমন্ত্রী জানালেন, তেলঙ্গনার কাজিপেট-এ তৈরি হচ্ছে নতুন রেলের কারখানা। সেখান থেকেই উৎপাদন হবে ১০০টি নতুন MEMU (Mainline Electric Multiple Unit) ট্রেন। এই ট্রেনগুলো ১৬ কোচের হবে এবং ভবিষ্যতে তা ২০ কোচ পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। একইসঙ্গে ঘোষণা করা হয়েছে ৫০টি নতুন ‘নমো ভারত’ এসি প্যাসেঞ্জার ট্রেন আনার পরিকল্পনাও।
মুম্বইয়ের ঘটনার পরেই বদল রেলের ভাবনায়
সাম্প্রতিক মুম্বই দুর্ঘটনা—যেখানে ঠাসা ভিড়ে ট্রেনের দরজায় ঝুলতে গিয়ে পড়ে মৃত্যু হয় ৪ জন যাত্রীর—চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, আজকের দিনে লোকাল ট্রেনে যাতায়াত কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। সেই ধাক্কা থেকেই শিক্ষা নিয়ে এবার আগেভাগে রেল ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে চাইছে কেন্দ্র।
শিয়ালদহ ডিভিশনে আশার আলো
২০২৪ সালে শিয়ালদহ উত্তর ও দক্ষিণ শাখায় সব লোকাল ট্রেন ১২ কোচ করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু তাতেও সমস্যার খুব একটা সমাধান হয়নি। কারণ প্রতিদিন প্রায় ৮৯২টি ট্রেন চলে এই ডিভিশনে। বারাসাত, ব্যারাকপুর, শান্তিপুর, নৈহাটি, বনগাঁ—অফিস টাইমে সব জায়গাতেই একই ছবি—পাদানিতে ঝুলে যাওয়া, ঠেলাঠেলি, রিস্ক নিয়ে যাত্রা। এখন ১৬ কোচের ট্রেন চালু হলে প্রতিদিনের সেই যন্ত্রণাদায়ক যাত্রা অনেকটা স্বস্তিদায়ক হতে পারে বলে মনে করছেন যাত্রীরা।
কোথায় চালু হবে এই নতুন ট্রেন?
যদিও এখনও সরকারিভাবে জানানো হয়নি কোন কোন শহরে প্রথমে চালু হবে এই ১৬ কোচের MEMU ট্রেন, তবে অনুমান করা হচ্ছে কলকাতা, মুম্বই, দিল্লি, চেন্নাইয়ের মতো অতিভিড়যুক্ত শহরেই প্রথমে তা শুরু হবে। কারণ এই শহরগুলির লোকাল ট্রেন ব্যবস্থাই ভারতে সবচেয়ে বেশি যাত্রী বহন করে।
যাত্রীদের দীর্ঘদিনের দাবি এবার পূরণ?
লোকাল ট্রেনে উঠতে না পেরে অনেক যাত্রী দিনের পর দিন প্ল্যাটফর্মেই সময় কাটিয়েছেন। কেউ ভিড়ে পড়ে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন, কেউ বা চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে চোট পেয়েছেন। সেই সব কষ্টের ছবি এখনো অনেকের চোখে ভাসে। ১৬ কোচের ট্রেন সেই যন্ত্রণার কিছুটা উপশম এনে দিতে পারবে, এই বিশ্বাসই এখন আঁকড়ে ধরেছেন প্রতিদিনকার যাত্রীরা।
একটি ঘোষণা, একটি উদ্যোগ, আর তাতেই জেগেছে নতুন আশার আলো। বাদুড়ঝোলা যাত্রার দিন কি সত্যিই শেষের পথে? যদি সব কিছু পরিকল্পনামাফিক চলে, তবে হয়তো এই একুশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে লোকাল ট্রেনও হতে পারে আরামের মাধ্যম, শুধু গন্তব্যে পৌঁছানোর নয়, বরং নিরাপদ ও সম্মানজনক যাত্রার প্রতীক।