২২ এপ্রিল, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পরে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসে কড়া বার্তা দিয়েছে ভারত। এই অভিযানের ছায়া এসে পড়েছে সীমান্ত নিরাপত্তাতেও। সরকারি রিপোর্ট বলছে, ৭ মে থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানের পর প্রায় ২০০০ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, আরও বহু অনুপ্রবেশকারী নিজেরাই ভারত ছেড়ে স্বেচ্ছায় বাংলাদেশে ফিরেছেন।
গুজরাটে সবচেয়ে বেশি ধরা পড়েছে অনুপ্রবেশকারী
ধারণা করা হয়েছিল সীমান্তবর্তী রাজ্য অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, মেঘালয় কিংবা অসম থেকেই বেশি অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়বে। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী আটক হয়েছেন গুজরাট থেকে। এরপরের স্থান দিল্লি ও হরিয়ানা। কেন্দ্রের মতে, সীমান্ত পেরিয়ে বহু অনুপ্রবেশকারী গুজরাট হয়ে দেশের ভিতরে ঢুকে পড়েছিলেন। এমনকী মহারাষ্ট্র ও রাজস্থানেও তাঁদের হদিস মিলেছে।
কীভাবে চলছে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া?
যাঁদের কাছে ভারতে থাকার বৈধ নথিপত্র নেই, তাঁদের আটক করে নির্দিষ্ট ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হচ্ছে। এরপর ভারতীয় বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে তাঁদের সীমান্তে নিয়ে গিয়ে অস্থায়ী শিবিরে রাখা হচ্ছে। সেখানে BSF-এর হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। পরে, প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাঁদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সীমান্ত পার হওয়ার আগে দরিদ্রদের দেওয়া হচ্ছে সামান্য খাদ্যসামগ্রী ও বাংলাদেশি মুদ্রা। মূলত ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং অসম সীমান্ত ব্যবহার করেই এই প্রত্যাবর্তন হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের নাম তালিকায় না থাকায় উঠছে প্রশ্ন
অনেকের ধারণা, উত্তর-পূর্বের বিজেপি শাসিত রাজ্য বলেই এই তিন রাজ্য বেছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা জানাচ্ছেন, আসল কারণ হল সীমান্তের ভৌগোলিক গঠন। কোথাও কোথাও একই বাড়ির একদিকে ভারত, অন্যদিকে বাংলাদেশ। আইনশৃঙ্খলার জটিলতা এড়াতে যেসব জায়গায় সীমান্ত স্পষ্ট ও খোলা রয়েছে, সেসব জায়গা থেকেই অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
স্বেচ্ছায় চলে যাচ্ছেন অনেক বাংলাদেশি
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটাই কঠোর হয়েছে যে, অনেকেই ভয় পেয়ে স্বেচ্ছায় দেশ ছেড়ে ফিরে যাচ্ছেন। এক স্বরাষ্ট্র কর্তা জানিয়েছেন, “যাঁদের ধরা হচ্ছে, তাঁদের বেশিরভাগই নির্বাসনের বিরুদ্ধে কিছু বলছেন না। বরং আত্মীয়দের ফোন করে বলছেন, সীমান্ত থেকে নিয়ে যেতে।” যাঁরা কয়েক দশক ধরে ভারতে আছেন, শুধু তাঁরাই আপত্তি করছেন।
সহযোগিতায় BGB, চলছে শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবর্তন
এই প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করছে বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড (BGB)। কেন্দ্র জানিয়েছে, এখনকার প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া সংঘর্ষ নয়, বরং একপ্রকার ‘মানবিক প্রত্যাবাসন’। ভবিষ্যতে এই ধরনের অভিযান আরও কড়া হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
উল্লেখ্য, এই মুহূর্তে সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের অবস্থান একেবারে স্পষ্ট। অবৈধ অনুপ্রবেশ রুখতেই এই অভিযান, এবং তা যে কার্যকর হচ্ছে, তার প্রমাণ গত কয়েক সপ্তাহের পরিসংখ্যান। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর শুধু সন্ত্রাসবাদ নয়, অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধেও ভারত যে কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় বার্তা।