India : ভারতে দারিদ্র হ্রাসের এক বিশাল কাহিনি সামনে এনেছে বিশ্বব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক রিপোর্ট। জানানো হয়েছে, ২০১১-১২ সালে যেখানে দেশের চরম দারিদ্রের হার ছিল ২৭.১ শতাংশ, ২০২২-২৩ সালে তা নেমে এসেছে মাত্র ৫.৩ শতাংশে। সংখ্যার হিসাবে, এই সময়কালে প্রায় ২৭ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
এই তথ্য সামনে আসতেই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকারের সামাজিক উন্নয়ন নীতি ও কর্মসূচিগুলি।
করোনা ধাক্কা সামলেও ‘গরিবি হটাও’ অভিযান জারি
বিশ্বব্যাঙ্কের আগে প্রকাশিত ‘পভার্টি অ্যান্ড শেয়ার্ড প্রসপারিটি’ রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২০ সালের করোনা অতিমারির সময় অন্তত ৫.৬ কোটি মানুষ আবার দারিদ্রসীমার নীচে নেমে গিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও ২০২২-২৩ সালের মধ্যে ভারত ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং ফের দারিদ্র হ্রাসের ধারায় ফিরে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রীর গরিব কল্যাণ যোজনা, খাদ্যসুরক্ষা প্রকল্প, DBT (Direct Benefit Transfer) সহ একাধিক পদক্ষেপ এই পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।
গ্রাম-শহর উভয় জায়গাতেই ইতিবাচক ফল
বিশ্বব্যাঙ্কের মতে, শুধুমাত্র শহর নয়, গ্রামাঞ্চলেও দারিদ্রের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। আগে যেখানে নিম্ন-মধ্য আয়ের দারিদ্রের হার ছিল ৫৭.৭ শতাংশ, এখন তা এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৩.৯ শতাংশে।
এক সময় যে সমস্ত রাজ্যগুলি দারিদ্র্যের নিরিখে পিছিয়ে ছিল, সেখানেও উন্নয়নের ছাপ পড়েছে। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা সহ পূর্ব ও মধ্য ভারতের রাজ্যগুলি উন্নতির পথ দেখাচ্ছে।
দারিদ্র সংজ্ঞার পরিবর্তন, তবুও ভারতের অগ্রগতি
বিশ্বব্যাঙ্ক পূর্বে দৈনিক ২.১৫ ডলার (প্রায় ১৮৪ টাকা) ব্যয়ক্ষমতাকে ‘চরম দারিদ্র’ হিসেবে গণ্য করত। তবে ২০২১ সালে এই মানদণ্ড বদলে হয়ে যায় দৈনিক ৩ ডলার (প্রায় ২৫৭ টাকা)। এই নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী বিচার করলেও ভারতের দারিদ্রের হার হ্রাস পেয়েছে।
এই পরিসংখ্যান ভারতের সামাজিক সুরক্ষা কাঠামো, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সুযোগ ও স্বাস্থ্য-শিক্ষা খাতে বিনিয়োগের প্রতিফলন হিসেবেই ধরা হচ্ছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যতের দিশা
এই রিপোর্ট প্রকাশের পর বিজেপি দাবি করছে, এটি মোদী সরকারের “সাবকা সাথ, সাবকা বিকাশ” মডেলের সার্থকতা প্রমাণ করে। অন্যদিকে বিরোধীরা বলছেন, গড় আয় বাড়লেও বৈষম্য বাড়ছে—এই পরিসংখ্যানের মধ্যে মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংগ্রাম উঠে আসেনি।
তবে সন্দেহ নেই, দারিদ্র দূরীকরণে ভারতের অগ্রগতি আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশংসিত হচ্ছে। আগামী দিনে এই ধারা বজায় রাখা এবং নতুন চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করাই হবে আসল লক্ষ।
উল্লেখ্য, দারিদ্র হ্রাসের এই পরিসংখ্যান শুধুমাত্র সংখ্যার খেলা নয়, বরং দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িত। যদি এই উন্নয়নের ধারাকে আরও গতিময় করা যায়, তবে “উন্নত ভারত” শুধু স্বপ্ন নয়, বাস্তব হয়ে উঠবে।