রবিবার সন্ধ্যায় মহারাষ্ট্রের পুণেতে ঘটে গেল এক মর্মান্তিক ঘটনা। ইন্দ্রায়নী নদীর উপর একটি পুরনো সেতুর একাংশ আচমকা ভেঙে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, তখন সেতুর উপর ছিলেন বহু পর্যটক। মুহূর্তের মধ্যেই বহুজন নদীতে তলিয়ে যান। ইতিমধ্যেই ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ৫ জন। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন নদীর জলে ডুবে গিয়েছেন।
উদ্ধারে নেমেছে NDRF, এখনও নিখোঁজ বহু
ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছয় NDRF-এর দুটি টিম। নদীতে তল্লাশি শুরু হয়। এখনো পর্যন্ত তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে। যদিও প্রবল স্রোতের কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পুরনো সেতুতে পর্যটকদের ওঠার অনুমতি, প্রশ্নে প্রশাসন
এই দুর্ঘটনার পর থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে প্রশাসনের ভূমিকাকে ঘিরে। কীভাবে একটি পুরনো ও দীর্ঘদিন সংস্কারবিহীন সেতুতে এত পর্যটক একসঙ্গে উঠলেন? স্থানীয়দের একাংশের দাবি, বহুদিন ধরেই এই সেতু বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। বারবার প্রশাসনকে জানানো হলেও কার্যকর কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
দুঃখপ্রকাশ ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “পর্যটকদের তলিয়ে যাওয়ার খবর হৃদয়বিদারক। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সমবেদনা জানাই। দ্রুত উদ্ধার ও সাহায্য পৌঁছানোর আবেদন জানাচ্ছি প্রশাসনের কাছে।”
এদিকে রাজনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ নাম না করে বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন, “পোস্তা উড়ালপুল ভাঙার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন অ্যাক্ট অব ফ্রড। তাহলে মহারাষ্ট্রের ঘটনাতেও একই বক্তব্য প্রত্যাশিত।” পাল্টা জবাবে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “পোস্তার দুর্ঘটনার সঙ্গে পুণের ঘটনার তুলনা অপ্রাসঙ্গিক। দুর্ঘটনা নিয়ে রাজনীতি না করে সাহায্যের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।”
দর্শকদের চোখে জল, ভেঙে পড়া পরিবার
ঘটনাস্থলে থাকা এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমার সামনেই তিনটে মানুষ জলে পড়ে গেল। একজনকে ধরতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু স্রোত টেনে নিয়ে গেল।” নদীর ধার ঘিরে এখন শুধুই কান্নার আওয়াজ, উৎকণ্ঠা আর চিৎকার।
আগামী পদক্ষেপ কী?
পুণে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণের গাফিলতি, এবং প্রশাসনিক উদাসীনতা—সব কিছুই খতিয়ে দেখা হবে। নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য ও আহতদের চিকিৎসার সমস্ত খরচ বহনের আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।
এই দুর্ঘটনা ফের একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল দেশের বহু পরিকাঠামো কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। নিছক অবহেলার বলি হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তলিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর পরিবারের কান্না শুধু নদীর ঢেউয়ে নয়, প্রশ্ন তুলছে গোটা সিস্টেমের উপরে।