RBI : জুনের শুরুতেই সাধারণ মানুষের জন্য বড় সুখবর নিয়ে এল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI)। শুক্রবার সকালে গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা ঘোষণা করলেন, এক ধাক্কায় ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমানো হল রেপো রেট। ফলে ৬ শতাংশ থেকে সরাসরি ৫.৫ শতাংশে নামল রেপো রেট।
এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি স্বস্তি পাবেন হোম লোন, গাড়ি লোন বা পার্সোনাল লোনের উপর নির্ভরশীল মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। কারণ, রেপো রেটের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকে লোনের উপর সুদের হার। অর্থাৎ, রেপো রেট কমলে কমবে EMI-ও।
পরপর তিনবার রেপো রেট হ্রাস, কী বার্তা দিচ্ছে RBI?
এটি ছিল RBI-র মনিটারি পলিসি কমিটির (MPC) তিন দিনের বৈঠকের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এবারের সিদ্ধান্তে স্পষ্ট, মুদ্রাস্ফীতির মোকাবিলায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ধীরে ধীরে কিছুটা শিথিলতা দেখাতে চাইছে। এর আগে এপ্রিল মাসেও ২৫ বেসিস পয়েন্ট এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানো হয়েছিল। অর্থাৎ, ফেব্রুয়ারি থেকে জুন—মাত্র চার মাসেই মোট ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমেছে রেপো রেট। এর ফলে দেশের আর্থিক প্রবাহে বাড়বে গতি, ব্যাঙ্কগুলি সহজ শর্তে ঋণ দিতে পারবে, বাড়বে বাজারে খরচ, আর অর্থনীতি পাবে চাঙ্গা হওয়ার অক্সিজেন।
রেপো রেট কমলে আপনার কী লাভ? বোঝা যাবে এইভাবে
রেপো রেট হল সেই হার, যার ভিত্তিতে RBI বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেয়। রেপো রেট বাড়লে ব্যাঙ্কগুলিও বেশি সুদে সাধারণ গ্রাহকদের ঋণ দেয়। আর রেপো রেট কমলে, সুদের হারও কমে আসে। ফলে হোম লোন হোক বা গাড়ি লোন—সব ক্ষেত্রেই কমে EMI।
ধরা যাক, আপনি কোনও ব্যাঙ্ক থেকে ২০ লক্ষ টাকার হোম লোন নিয়েছেন ২০ বছরের জন্য। আগে যদি আপনার EMI হতো ১৯,৩০০ টাকা, তবে এখন তা হতে পারে ১৮,৫০০ টাকার কাছাকাছি। যদিও নির্ভর করবে কোন ব্যাঙ্কে আপনার লোন রয়েছে, এবং তারা সুদের হার কত কমায়।
নতুন লোন নেওয়ার এটাই সেরা সময়? বিশ্লেষণ বলছে…
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রেট কাটের জেরে লোন নেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। বিশেষত যাঁরা নতুন হোম লোন, পার্সোনাল লোন বা বিজ়নেস লোন নিতে চাইছেন, তাঁদের জন্য এটি স্বস্তির সময়। ব্যাঙ্কগুলি আগামী সপ্তাহ থেকেই নতুন সুদের হার চালু করতে পারে।
তবে পুরনো লোন যাঁদের রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে রেপো রেট লিঙ্কড সুদ (RLLR) থাকলে তবেই এই সুবিধা মিলবে। অর্থাৎ, ফিক্সড রেট লোনের ক্ষেত্রে পরিবর্তন হবে না, কিন্তু ফ্লোটিং রেটের ক্ষেত্রে মিলবে ছাড়।
RBI গভর্নরের ভাষায়, “সময়ের দাবি মেটাচ্ছে এই সিদ্ধান্ত”
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা বলেন, “দেশের আর্থিক পরিবেশ, মুদ্রাস্ফীতি ও ক্ষুদ্র অর্থনীতির বিশ্লেষণের ভিত্তিতে আমরা ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে রেপো রেট ৫.৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। SDF-ও কমিয়ে ৫.২৫ শতাংশ করা হয়েছে।”
ভবিষ্যতে রেপো রেট আরও কমবে? বাজার চেয়ে আছে RBI-র দিকে
বিশ্লেষকদের মতে, যদি মূল্যবৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে, তবে আগামী এক-দু’টি কোয়ার্টারে RBI আরও একবার রেপো রেট ছাঁটতে পারে। ফলে ঋণগ্রহীতাদের EMI কমার সম্ভাবনা আরও থাকবে। তবে RBI চায় ব্যালান্স বজায় রাখতে—মুদ্রাস্ফীতি কমানো ও প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা, দুইয়ের সমান গুরুত্ব।
প্রসঙ্গত, RBI-র রেপো রেট ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তে মধ্যবিত্তের মুখে হাসি। EMI কমার ফলে বাড়তি সঞ্চয়ের সুযোগ মিলবে। বাজারের আশা, এভাবে চললে ধীরে ধীরে ভারতীয় অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হয়ে উঠবে।