ISRO : একটি নাম, একটি অভিযাত্রা, একটি দেশের স্বপ্ন। স্বাধীন ভারতের প্রথম নভোচর রাকেশ শর্মার পর ফের এক ভারতীয় পা রাখতে চলেছেন আন্তর্জাতিক মহাকাশে। এবারে সেই গর্বের নাম—শুভাংশু শুক্লা। আগামী ১৯ জুন উৎক্ষেপণ হতে চলেছে Ax-4 মিশন, যার যাত্রীদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের তরুণ মুখ শুভাংশু। এই অভিযানের লক্ষ্য আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন বা ISS-এ পৌঁছে বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং প্রযুক্তিগত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া। এবং এই সফরের সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে ভারতের দ্বিতীয়বারের মতো মহাকাশে মানুষের উপস্থিতির কাহিনি।
কে এই শুভাংশু শুক্লা?
উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান শুভাংশু বরাবরই ছিলেন বিজ্ঞানমনস্ক ও অধ্যবসায়ী। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনার পরে আমেরিকায় উচ্চতর গবেষণা, তারপর নভোচারী প্রশিক্ষণে সুযোগ—সবটাই ধাপে ধাপে অর্জন করেছেন কঠোর পরিশ্রমে। নাসার সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালিত Ax-4 মিশনে নির্বাচিত হওয়ার পরেই ভারতের তরফে তাঁকে বিশেষ শুভেচ্ছা ও সংবর্ধনা দেওয়া হয়। দেশজুড়ে উচ্ছ্বাস, নতুন প্রজন্মের চোখে স্বপ্ন।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই Ax-4 মিশন?
Ax-4 মিশন পরিচালনা করছে Axiom Space, যা নাসার সঙ্গে যৌথভাবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে বেসরকারি গবেষণার পথ খুলে দিয়েছে। শুভাংশুর উপস্থিতি শুধুমাত্র এক ভারতীয় হিসেবেই নয়, বরং এটি ভারতের তরুণ প্রজন্মের বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনার স্বীকৃতিও বটে। এই অভিযানের মাধ্যমে মহাকাশ স্টেশনে বেশ কিছু নতুন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালানো হবে। সৌরশক্তি, মানবদেহের মাধ্যাকর্ষণহীন অবস্থার প্রতিক্রিয়া, এবং মাইক্রো-গ্র্যাভিটি-তে ওষুধের কার্যকারিতা—এসবই থাকছে গবেষণার মূল তালিকায়।
রাকেশ শর্মার স্মৃতি ফিরছে
১৯৮৪ সালে রাকেশ শর্মা প্রথম ভারতীয় হিসেবে পা রেখেছিলেন মহাকাশে। সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘Soyuz T-11’ অভিযানের অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ অভিযানে গিয়েছিলেন তিনি। ‘হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ’ বলে সারা দেশে যে গর্ব ছড়িয়েছিলেন, আজকের শুভাংশু যেন সেই অধ্যায়েরই নতুন পৃষ্ঠা। শুভাংশু নিজেও জানিয়েছেন, “রাকেশ শর্মা স্যারের পথ অনুসরণ করেই আমি আজ এখানে। উনি আমার অনুপ্রেরণা। আমি চাই, ভবিষ্যতের আরও শুভাংশুরা এই স্বপ্ন দেখুক।”
ভারতের মহাকাশে নতুন পদক্ষেপ
শুধু ISRO নয়, ভারতের তরুণ গবেষক ও বিজ্ঞানীদের জন্য এই অভিযান এক নতুন দরজা খুলে দিচ্ছে। বেসরকারি সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরও বেশি ভারতীয় যুবক-যুবতী মহাকাশ অভিযানে অংশ নিতে পারবেন—এমনটাই আশা করছে মহাকাশ গবেষণা মহল। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ISRO ভবিষ্যতে শুভাংশুর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ‘গগনযান’ মিশনে তাঁকে পরামর্শদাতা হিসেবে রাখতে চায়।
১৯ জুন: এক নজরে দেশবাসীর দিকে চেয়ে মহাকাশে পা
১৯ জুন উৎক্ষেপণ হবে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে। উৎক্ষেপণের মুহূর্তটি লাইভ সম্প্রচারিত হবে বিশ্বজুড়ে। ভারতের কোটি কোটি মানুষের নজর থাকবে সেই দিকে। কারণ এটুকুই তো যথেষ্ট—একজন ভারতীয় আবার মহাকাশে!
এই অভিযান শুধু শুভাংশু শুক্লার একক সাফল্য নয়। এটা ভারতের, কোটি স্বপ্ন দেখার সাহসী যুবসমাজের সাফল্য। যাঁরা ভেবেছিল—জানলা দিয়ে তারা দেখলেই হবে না, দরজা খুলে বেরিয়ে পড়তে হবে ছুঁতে।