Honeymoon Murder : মাত্র ১১ দিন আগে বিয়ে হয়েছিল রাজা রঘুবংশী ও সোনমের। ইন্দোরে ছিল ঘরোয়া আয়োজন, আত্মীয়দের ভিড়ে সেজে উঠেছিল দুই পরিবারের মিলনমেলা। তবে কেউ ভাবতেও পারেননি, এই বিয়েই ডেকে আনবে এক নির্মম হত্যাকাণ্ড। হানিমুনের ছলেই স্বামীকে খুনের ছক কষেছিলেন নববধূ সোনম, এমনই অভিযোগে তোলপাড় দেশজুড়ে।
প্রেমিকের সঙ্গে মিলে খুনের পরিকল্পনা
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোনমের সঙ্গে বিয়ের আগে থেকেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল রাজ কুশওয়া নামে এক যুবকের। সেই সম্পর্ক নিয়েই শুরু হয় বিবাদ। পরিবার কুশওয়াকে মেনে না নেওয়ায় সোনমকে বিয়ে দেওয়া হয় রাজা রঘুবংশীর সঙ্গে। রাজা ছিলেন তাঁদের পারিবারিক ব্যবসার কর্মী—একজন অ্যাকাউন্টেন্ট। সোনমের পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নিলেও, সোনম মেনে নিতে পারেননি। এর পরেই জন্ম নেয় ভয়ঙ্কর এক ষড়যন্ত্র।
হানিমুনের ফাঁদে মৃত্যু
বিয়ের পরে দম্পতি হানিমুনে যান মেঘালয়ে। সেখানেই, ২৩ মে থেকে নিখোঁজ ছিলেন দু’জন। পরে জানা যায়, মেঘালয়ের নংরিয়াত গ্রামে একটি হোমস্টে থেকে বেরোনোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নিখোঁজ হন রাজা। ২ জুন উদ্ধার হয় তাঁর মৃতদেহ। তার থেকেও বেশি আতঙ্কের বিষয়—রাজা নিহত হওয়ার কিছুক্ষণ আগেই তিনজন ভাড়াটে খুনির সঙ্গে দেখা হয়েছিল সোনমের।
২০ লক্ষ টাকার প্রতিশ্রুতি খুনের বদলে
পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, প্রথমে ৪ লক্ষ টাকায় চুক্তি হয়েছিল খুনিদের সঙ্গে। পরে তা বাড়িয়ে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এমনকি হায়ার করার সময়ই ১৫ হাজার টাকা ক্যাশ দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি তদন্তকারীদের। বাকি টাকা রাজাকে খুনের পর পরিশোধ করার আশ্বাস ছিল সোনমের পক্ষ থেকে।
গ্রেফতার প্রেমিক, তিন খুনি ও সোনম
এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে প্রেমিক রাজ কুশওয়া, এবং তিনজন ভাড়াটে খুনি—আকাশ রাজপুর, বিশাল সিং চৌহান ও আনন্দ কুর্মি। জানা গিয়েছে, বেঙ্গালুরুতেই প্রথম বার রাজা ও সোনমের সঙ্গে দেখা হয়েছিল এই তিন খুনির। সেখান থেকে কানেক্টিং ফ্লাইট ধরে পৌঁছেছিলেন মেঘালয়ে।
আত্মসমর্পণ, ভাইকে ফোনে জানায় ঠিকানা
নিখোঁজ হওয়ার পর সোনমের খোঁজ মিলছিল না। অবশেষে ৯ জুন উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরের একটি খাবারের দোকানে কাঁদতে কাঁদতে ফোন করেন নিজের ভাইকে। দোকানের এক কর্মী বিষয়টি টের পেয়ে পুলিশে খবর দেন। সেখান থেকেই আটক করা হয় সোনমকে। পরে তিনি আত্মসমর্পণ করেন এবং বর্তমানে তিনি তিন দিনের ট্রানজিট রিমান্ডে রয়েছেন মেঘালয় পুলিশের হেফাজতে।
পরিবারের আর্তি, ‘কঠোরতম শাস্তি চাই’
রাজা রঘুবংশীর পরিবার সোনম এবং তাঁর প্রেমিক-সহ সব অভিযুক্তের কঠোরতম শাস্তির দাবি জানিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, রাজার মৃতদেহ আসার পরে তারা রাজ কুশওয়াকে তাঁদের বাড়ির আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতেও দেখেছে, যা সন্দেহ আরও ঘনীভূত করেছে।
সমাপ্তি নয়, শুরু মাত্র তদন্তের
এই ঘটনার জেরে শুধু একটি সংসার নয়, একটি পরিবারের স্বপ্ন চুরমার হয়ে গিয়েছে। সদ্যবিবাহিত এক তরুণী কীভাবে এমন ভয়ানক ষড়যন্ত্র করতে পারলেন, তা ভাবাচ্ছে গোটা দেশকে। প্রেম, হতাশা, প্রতিশোধ—সবকিছুর মিশ্রণে তৈরি এই খুনের কাহিনি এখন শুধুই আইনের হাতে। তবে এই ঘটনার পরিণাম শুধু বিচারে সীমাবদ্ধ থাকবে না, প্রশ্ন তুলবে সম্পর্ক, বিশ্বাস ও নৈতিকতার গভীর কাঠামোতেও।