US-India Relations : মার্কিন মুলুকে পলিটিক্স যতই ঘরোয়া হোক, তার প্রতিধ্বনি যেন ধাক্কা মারে দিল্লির অর্থনীতির দরজায়। সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসে অনুমোদিত হয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’। এই বিলেই রয়েছে এক বিশেষ অংশ—যা সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে ভারতের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ, রেমিট্যান্স বা প্রবাসী অর্থপ্রবাহের উপর।
আমেরিকা থেকেই সব চেয়ে বেশি টাকা!
বিশ্বব্যাঙ্ক ও আরবিআই-এর তথ্য বলছে, শুধুমাত্র ২০২৪ সালেই ভারত পেয়েছে প্রায় ১২৯০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ এসেছে আমেরিকা থেকে। H1B ভিসাধারী, গ্রিন কার্ড হোল্ডার সহ লক্ষ লক্ষ ভারতীয় কর্মী সেই মার্কিন মাটিতে ঘাম ঝরিয়ে যে টাকা পরিবারকে পাঠাচ্ছেন, সেটাই তো দেশের এক বিশাল ‘আনঅফিসিয়াল লাইফলাইন’।
মাস্ক বনাম ট্রাম্প: সংঘাত শুরু করের হার নিয়ে
‘বিউটিফুল বিল’-এর প্রাথমিক খসড়ায় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের উপর ৫% কর বসানোর প্রস্তাব ছিল। পরবর্তীতে সেটি কমিয়ে ৩.৫% করা হলেও তাতে সন্তুষ্ট নন এলন মাস্ক। কারণ তাঁর মতে, এই বিল কার্যকর হলে প্রশাসনের উপর আর্থিক চাপ বাড়বে, এবং এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন প্রযুক্তি খাতে কর্মরত বহু প্রবাসী।
ট্রাম্পের দাবি, এই বিল আমেরিকান নাগরিকদের জন্য ‘জনকল্যাণমুখী’ এবং অর্থনীতিকে ‘নতুন গতি’ দেবে। আর মাস্ক বলছেন, “এটা সরকারকে অকারণে ব্যয়বহুল করে তুলবে।”
ভারতের মাথাব্যথা: লাভ না ক্ষতি?
যদিও কর কমানো হয়েছে, তবুও ৩.৫% কর বসলে ভারতের হাতে এসে পৌঁছানো রেমিট্যান্সে কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে—এ কথা একাধিক অর্থনীতিবিদ বলছেন। গত ১০ বছরে ভারতের রেমিট্যান্স প্রবাহ ৫৭% বেড়েছে। ট্রাম্পের নীতির বলি হলে এই বৃদ্ধির হার থমকে যেতে পারে।
মাস্কের পদত্যাগ: ‘বিশেষ উপদেষ্টা’ এখন ‘বিরোধী কণ্ঠ’
চমকপ্রদভাবে জানুয়ারিতে ট্রাম্প নিজে মাস্ককে ‘সরকারি দক্ষতা বিষয়ক দফতর’-এর প্রধান হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল বাজেট কমানো ও সাশ্রয়ী প্রশাসন গড়া। এখন সেই মাস্ক-ই এই বিলকে বলছেন ‘বিপর্যয়ের সূচনা’। সম্পর্কেও চিড় ধরেছে। ট্রাম্প নিজেই বলছেন—“আর জানি না আমাদের মধ্যে দারুণ সম্পর্ক থাকবে কি না!”
সামগ্রিক অভিঘাত- শুধু ভারত নয়
এই করনীতি কেবল ভারতের নয়, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ফিলিপিন্স, মেক্সিকোসহ বহু রেমিট্যান্স-নির্ভর দেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে যেহেতু সংখ্যাটা বড়, তাই প্রভাবও হবে গভীর।
বিদেশে কাজ মানেই লাভের খেলা নয়!
বিদেশে কাজ করে দেশের অর্থনীতিতে রোজগার পাঠানো এতদিন ছিল গর্বের বিষয়। কিন্তু করের কাঁটায় সেই গর্বে এবার যেন লাগতে পারে থামা। ট্রাম্পের ‘বিউটিফুল বিল’ ভারতীয়দের জন্য আদৌ কতটা ‘বিউটিফুল’ হবে, তা সময় বলবে। তবে এই নীতিগত সংঘাতে ভারতের সামনে একটি প্রশ্ন থেকেই যাবে—আমরা কি খুব বেশি নির্ভর করে ফেলেছি প্রবাসীদের উপর?