চারধাম যাত্রার মধ্যে অন্যতম কেদারনাথ ধাম থেকে ফিরছিল একটি হেলিকপ্টার। কিন্তু রবিবার সকালে উত্তরাখণ্ডের গৌরিকুণ্ডের জঙ্গলে ভেঙে পড়ে সেটি। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, কপ্টারটিতে পাইলট-সহ মোট ৭ জন যাত্রী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক, ১ জন শিশু এবং একজন পাইলট রয়েছেন। এখনই নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা না গেলেও, সকলের মৃত্যুর আশঙ্কাই করা হচ্ছে।
আবহাওয়ার খামখেয়ালিতেই দুর্ঘটনা?
গত কয়েক দিন ধরে কেদারনাথ ভ্যালিতে আবহাওয়া মারাত্মক খারাপ। ঘন কুয়াশা, হঠাৎ বৃষ্টি ও প্রবল ঝোড়ো হাওয়ার কারণে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা ছিলই। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কপ্টারটি কেদারনাথ থেকে গুপ্তকাশীর দিকে যাচ্ছিল, মাঝপথেই তা নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং জঙ্গলের মাঝে ভেঙে পড়ে।
প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে, খারাপ আবহাওয়াই এই দুর্ঘটনার মূল কারণ। কপ্টারটির সংস্থা আরিয়ান অ্যাভিয়েশন, যারা প্রতি বছর চারধাম যাত্রী পরিবহণের দায়িত্ব নেয়।
চলছে রেসকিউ অপারেশন
উত্তরাখণ্ড পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) ভি মুরুগেশন জানান, “ভেঙে পড়া হেলিকপ্টার এবং নিখোঁজ যাত্রীদের সন্ধানে রেসকিউ অভিযান শুরু হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং উদ্ধারকারী দল একত্রে তল্লাশিতে নেমেছে। দুর্গম জায়গা হওয়ায় অভিযান কিছুটা ধীর গতিতে এগোচ্ছে, তবে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি।” এছাড়াও ড্রোন ও থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরার সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া ও প্রার্থনা
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, “রুদ্রপ্রয়াগ জেলায় হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার খবর অত্যন্ত দুঃখজনক। রেসকিউ অপারেশন চলছে, আমি সমস্ত যাত্রী ও তাঁদের পরিবারের মঙ্গল কামনা করছি। বাবা কেদারের আশীর্বাদে সবাই সুস্থ থাকুন, এই প্রার্থনাই করছি।”
এক মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় বড় দুর্ঘটনা
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই দুর্ঘটনার এক মাস আগেই (মে ২০২৫) উত্তরকাশীর গঙ্গানির কাছে আরেকটি হেলিকপ্টার ভেঙে পড়েছিল। সেই দুর্ঘটনায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল এবং একজন গুরুতর আহত হন। বারবার এই ধরণের দুর্ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে পাহাড়ি এলাকায় হেলিকপ্টার পরিষেবার মান ও পর্যাপ্ত নজরদারির অভাব নিয়ে।
সতর্ক হবে কি প্রশাসন?
চারধাম যাত্রা বছরে কয়েক লক্ষ ভক্তের কাছে ভরসার প্রতীক। কিন্তু একের পর এক দুর্ঘটনায় প্রশ্নের মুখে প্রশাসনের সতর্কতা এবং হেলিকপ্টার পরিষেবার সুরক্ষা ব্যবস্থা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র আবহাওয়ার উপর নির্ভর না করে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব। তা না হলে, পুণ্যার্থীদের জন্য বিপদের আশঙ্কা থেকেই যাবে।
আজকের দুর্ঘটনা শুধু কয়েকটি প্রাণের সম্ভাব্য ক্ষতি নয়, বরং বড় প্রশ্ন তুলে দিল—এই দুর্গম যাত্রাপথে আকাশপথে চলাচলের কতটা নিরাপত্তা আছে? সরকার এবং প্রশাসনের উচিত, এই বিষয়ে দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া। না হলে আগামী দিনে এই দুর্ঘটনাগুলি নিছক খবর হয়ে থাকবে, প্রতিকার হবে না কোনওদিনও।