গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে হাঁসফাঁস রাজ্য। সঙ্গে নতুন করে মাথাচাড়া দিচ্ছে করোনা সংক্রমণ। আর এই দুই মিলিয়েই ফের চর্চার কেন্দ্রে স্কুল খোলার প্রশ্ন। গত কয়েক দিন ধরেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অভিভাবকদের মুখে একটাই প্রশ্ন—এই গরমে, এই পরিস্থিতিতে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানো কি সঠিক হবে?
জল্পনা বনাম বাস্তবতা
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছিল জল্পনা, গরমের ছুটি হয়তো আরও বাড়বে। কেউ বলেছিলেন স্কুল খুলবে ১৬ জুন, কেউ ১৭। কিন্তু এই সব জল্পনায় জল ঢেলে, পূর্বনির্ধারিত সূচি মেনেই সোমবার, ২ জুন থেকে খুলে গিয়েছে রাজ্যের সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্কুল।
কতদিন ছুটি ছিল?
এ বছর রাজ্যে গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হয়েছিল ৯ মে থেকে, যা শেষ হয় ৩১ মে। অর্থাৎ মোট ২২ দিন বন্ধ ছিল স্কুল। অভিভাবকদের একাংশের দাবি ছিল, দাবদাহের পাশাপাশি কোভিডের বাড়বাড়ন্তের কারণে আরও কিছুদিন ছুটি দেওয়া উচিত ছিল। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে, এখনই নতুন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
কোথায় কতটা গরম?
উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় দিনের তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। কলকাতা, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বর্ধমান—একাধিক জায়গায় তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি হয়েছে। এর মাঝেই সকাল সকাল স্কুলে যাওয়া এবং দুপুরে ফেরার পথে পড়ুয়াদের অসুস্থ হয়ে পড়ার খবরও মিলেছে বিভিন্ন জায়গায়।
ফের বাড়ছে করোনা
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৮২ জন করোনা পজিটিভ হয়েছেন। বর্তমানে সক্রিয় সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮৭-এ। যদিও পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে বলেই দাবি করছে স্বাস্থ্য দফতর। তবে আগাম সতর্কতা না নিলে ফের বড় আকার নিতে পারে সংক্রমণ।
কী বলছে শিক্ষা দফতর?
রাজ্য শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমরা পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছি। এখনই কোনও নতুন ছুটি ঘোষণা করার পরিস্থিতি নেই। তবে যদি তাপমাত্রা বা সংক্রমণ কোনওটি মাত্রা ছাড়ায়, সেক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?
অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই দিনের প্রথম ভাগেই ক্লাস শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোথাও কোথাও ক্লাস শুরু হচ্ছে সকাল ৬:৩০টায় এবং শেষ হচ্ছে ১০:৩০টায়। স্বাস্থ্য ও শিক্ষাবিদদের পরামর্শ—স্কুলে যেন পর্যাপ্ত জল, ঘন ঘন বিশ্রাম এবং প্রয়োজনে মাস্ক ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা হয়।
অভিভাবকদের কণ্ঠে উদ্বেগ
শ্রীমতি মিতা সাহা, এক অভিভাবক বললেন, “শিশুদের গরমে স্কুলে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হচ্ছে। আবার করোনা ফের বাড়ছে শুনে ভয় লাগছে। সরকার অন্তত বিকল্প ব্যবস্থা করুক, যেমন অনলাইন ক্লাস।”
কী হতে পারে ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত?
এখনই ছুটি বাড়ানো হচ্ছে না, তবে গরম ও সংক্রমণের গতিপথ যদি ঊর্ধ্বমুখী হয়, প্রশাসন হয়তো ফের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে। শিক্ষা দফতর ও স্বাস্থ্যদফতর যৌথভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বলে খবর।