২২ মে, যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার ডহরমসিয়াহাটি গ্রামের বাড়েদা পাড়ায় এক ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় মতুয়া সম্প্রদায়ের হিন্দুদের ওপর চালানো হয় নির্মম তাণ্ডব। সেদিন বিকেল থেকেই শুরু হয় আগুন লাগানো, ভাঙচুর ও লুটপাট। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলে ওই হামলা। আগুনে পুড়ে যায় ১৮টি ঘর। শুধু আগুন নয়, হামলাকারীরা ঘরে ঢুকে ভেঙে দেয় আসবাবপত্র, লুট করে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হামলার সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও তারা কোনওরকম প্রতিরোধ করেনি। ইউনুস সরকারের অধীনে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুধুমাত্র দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে বলেই অভিযোগ উঠেছে।
হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ, সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব ঘিরে বিতর্ক
এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সামনে আসে নতুন এক বিতর্ক। বাংলাদেশে আবারও সংবিধান সংশোধনের কথা উঠেছে। একাধিক সংখ্যালঘু সংগঠন প্রশ্ন তুলেছে—যে দেশে হিন্দুরা দিনের পর দিন নির্যাতনের শিকার, সেখানে সংবিধান সংশোধন আদৌ নিরাপদ তো?
তবে প্রধানমন্ত্রী ইউনুস দাবি করেন, “সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে দেশের সব ধর্মাবলম্বী নাগরিকের অধিকার সমানভাবে নিশ্চিত করা হবে।” তিনি আরও বলেন, “বিদেশি মিডিয়া বাংলাদেশে ইসলামি কট্টরপন্থার উত্থান নিয়ে যে অভিযোগ করছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার।”
ঢাকায় ইউনুসের সঙ্গে বৈঠকে স্টিফেন শ্নেক
হামলার ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই ঢাকায় পৌঁছান ইউএস কমিশন ফর ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (USCIRF)-এর প্রধান স্টিফেন শ্নেক। ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ইউনুসের সঙ্গে তাঁর এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়।
সেখানে ইউনুস বলেন, “বিদেশি সাংবাদিকরা যেকোনও সময় বাংলাদেশে এসে বাস্তব চিত্র দেখতে পারেন। আমরা দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় কঠোর পরিশ্রম করছি।” বৈঠকে স্টিফেন শ্নেক জানতে চান—সাংবিধানিক সংশোধনের মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের অধিকার কতটা নিশ্চিত হবে? উত্তরে ইউনুস বলেন, “ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সংখ্যালঘু অধিকারের বিষয়টি যেকোনও সংশোধনীর মধ্যেই অগ্রাধিকার পাবে।”
‘সংখ্যালঘুরাও পাবেন সমান অধিকার’, বললেন ইউনুস
বৈঠকের শেষে ইউনুস আরও জানান, “সাংবিধানিক কমিশন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করছে। দেশের সংখ্যাগুরু মুসলিমরা যেসব অধিকার উপভোগ করছে, সংখ্যালঘুরাও সেই একই অধিকার ভোগ করবেন।” এই প্রসঙ্গে ইউনুস রাষ্ট্রসংঘের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সমস্যা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই সমস্যা সমাধানে রাষ্ট্রসংঘকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।”
উল্লেখ্য, যশোরের মতুয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় সরকার যেমন সমালোচনার মুখে, তেমনি ইউনুসের প্রতিশ্রুতিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই প্রতিশ্রুতি কেবল কাগজে না থেকে বাস্তবে রূপ নেবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় স্তরে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার আশ্বাস যতই দেওয়া হোক না কেন, মাঠে পুলিশ বা প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা বারবার এক প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে—বাংলাদেশের সংখ্যালঘু কি সত্যিই নিরাপদ?