Israel Iran Conflict : গতকাল রাতেই মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়াল ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের একটি পোস্টে। নিজের সরকারি এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, ‘যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে।’ কথাটা সংক্ষিপ্ত, কিন্তু অভিঘাত ভয়ঙ্কর। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে এই বার্তাকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের আগুনে হুঁশিয়ারি
এই বার্তার কয়েক ঘণ্টা আগেই মুখ খুলেছেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি সরাসরি খামেনেইকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘ইরানের সর্বোচ্চ নেতা কোথায় লুকিয়ে আছেন, সেটা আমরা জানি। এখনই তাঁকে বার করছি না। তবে আমাদের ধৈর্য ফুরিয়ে আসছে।’ এই কথার পরেই ইরানের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা—বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা নিছক কাকতাল নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্কের এক ভয়াবহ মোড়।
ইজ়রায়েল-ইরান সংঘাতের প্রেক্ষাপট
ইজ়রায়েলের সঙ্গে ইরানের সংঘাত নতুন নয়। গাজা, লেবানন, সিরিয়া—বিভিন্ন ফ্রন্টে দীর্ঘদিন ধরেই পরোক্ষ যুদ্ধে জড়িয়ে রয়েছে এই দুই রাষ্ট্র। তবে সম্প্রতি সিরিয়ায় ইরান-ঘনিষ্ঠ মিলিশিয়াদের ঘাঁটিতে একাধিক ইজ়রায়েলি বিমান হানার পর থেকে উত্তেজনা তুঙ্গে।
বিশেষ করে, ইরান মনে করছে ইজ়রায়েলের পিছনে রয়েছে মার্কিন আশীর্বাদ। তাই তাদের বক্তব্যে, আমেরিকাও এই যুদ্ধের অংশীদার।
বিশ্লেষকেরা কী বলছেন
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, খামেনেইয়ের পোস্ট নিছক আবেগ নয়। বরং এটি একটি স্ট্র্যাটেজিক বার্তা, যা ইরানের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। আমেরিকা ও ইজ়রায়েলকে কড়া বার্তা পৌঁছে দিতেই এই ভাষা বেছে নেওয়া হয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই সতর্ক হয়েছে। পারস্য উপসাগরের আশেপাশে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত নৌবাহিনী ও ড্রোন ইউনিট।
যুদ্ধ কি সত্যিই শুরু হয়ে গিয়েছে?
এই প্রশ্নটাই এখন সারা বিশ্বের মনে। যুদ্ধ মানে কি সরাসরি ট্যাঙ্ক ও ক্ষেপণাস্ত্রের লড়াই? নাকি সাইবার যুদ্ধ, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, নেটওয়ার্ক হামলা, কিংবা রাজনৈতিক চাপ? বিশেষজ্ঞদের মতে, আধুনিক যুদ্ধ অনেকটাই হাইব্রিড। তাই খামেনেইয়ের বক্তব্য ‘যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে’ বলতে একাধিক দিকেই ইঙ্গিত করতে পারে।
ভারতের অবস্থান কী?
এই পরিস্থিতিতে ভারতের কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ বাড়তে পারে। কারণ ইরান ভারতের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যসঙ্গী, বিশেষ করে চাবাহার বন্দর প্রকল্পে। আবার, আমেরিকার সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্কও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে কোনও এক পক্ষের প্রতি পক্ষপাত দেখালে ভারতের কূটনীতি বিপাকে পড়তে পারে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না দিলেও, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং রাশিয়ার কূটনৈতিক মহল সতর্ক বার্তা দিয়েছে। তুরস্ক, কাতার, সৌদি আরবের মতো দেশগুলি নিজেদের সীমান্তে প্রস্তুতি বাড়াতে শুরু করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে সংঘর্ষ নতুন নয়, কিন্তু এবার পরিস্থিতি অনেক বেশি জটিল। একদিকে ধর্মীয় নেতৃত্ব, অন্যদিকে পরমাণু সম্ভাবনা, তার উপর জড়িত বিশ্বশক্তি। এমন অবস্থায় একটিমাত্র বাক্য—‘যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে’—অনেক কিছু বলে দেয়।
এই বাক্য শুধু ইরান নয়, গোটা বিশ্বের শান্তির জন্য অশনি সংকেত। এখন প্রশ্ন একটাই—এই উত্তেজনার অবসান হবে কূটনৈতিক পথে, না কি শুরু হবে এক নতুন যুদ্ধচক্র?