‘অর্থনীতি না বাঁচলে দেশও বাঁচবে না’—এই তত্ত্বকে সামনে রেখে দেউলিয়া পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে পাকিস্তান IMF-এর ঋণ শোধ করতে শুরু করেছে দেশ বেচা! সরকারি বিমান সংস্থা Pakistan International Airlines (PIA), নিউ ইয়র্কের Roosevelt Hotel, এমনকি দেশের বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা NTDC—সবই এবার বিক্রির পথে।
আন্তর্জাতিক চাপেই বড় সিদ্ধান্ত
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)-এর আর্থিক সংস্কার প্যাকেজে সই করার পর পাকিস্তানকে শর্ত দেওয়া হয়, নিজের লোকসানি ও দুর্বল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে বেসরকারি খাতে তুলে দিতে হবে। সেই শর্ত মেনেই এই বিক্রির সিদ্ধান্ত। ২০২৬ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ সংস্থা এবং অন্যান্য স্ট্র্যাটেজিক সম্পদ বেচে ফেলার পরিকল্পনা করছে পাকিস্তান সরকার।
কে কিনছে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স?
PIA-র ৫১ থেকে ১০০ শতাংশ অংশীদারিত্ব কেনার জন্য ইতিমধ্যেই আবেদন করতে চলেছে দুই বেসরকারি সংস্থা—Airblue (একটি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স) এবং Gerry’s Group (ভ্রমণ সংস্থা)। পাশাপাশি পাকিস্তানের দুই ধনী ব্যবসায়ী মুহাম্মদ আলি তবা এবং আরিফ হাবিব নিজস্ব কনসোর্টিয়াম গঠন করে PIA কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া দেশের অন্যতম বড় কর্পোরেট হাউস Yunus Brothers Group-ও PIA কেনার দৌড়ে নেমেছে।
এর আগেও বিক্রির চেষ্টা হয়েছিল
এই প্রথম নয়। PIA বিক্রির চেষ্টা আগেও করেছে পাকিস্তান সরকার। যদিও শেষ পর্যন্ত শুধুমাত্র Blue World City নামের একটি সংস্থা অফার দেয়, কিন্তু তাদের প্রস্তাবিত মূল্য সরকারের নির্ধারিত মূল্য থেকে অনেকটাই কম ছিল, তাই সেই প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়।
শুধু PIA-ই নয়, বিক্রির তালিকায় রয়েছে হোটেলও
পাকিস্তানের অন্যতম বিদেশি সম্পত্তি নিউ ইয়র্কের Roosevelt Hotel-ও বিক্রি হতে চলেছে। এই হোটেল এক সময় পাকিস্তানের গর্ব ছিল। কিন্তু এখন সেটি রক্ষণাবেক্ষণে বিশাল খরচ ও লোকসানের মুখে পড়ে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বিদ্যুৎ সংস্থাও রেহাই পাচ্ছে না
২০২৬ সালের মধ্যে পাকিস্তানের জাতীয় বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা (NTDC)-কে একাধিক ভাগে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। মূল উদ্দেশ্য—লোকসান কমানো, সরকারের দায়িত্ব হ্রাস এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা।
সংকটে পাকিস্তান, বিপাকে সাধারণ মানুষ
একদিকে যেমন ঋণ শোধে সরকারের ঘরে পয়সা ঢোকার দরকার, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বিক্রি করা মানে ভবিষ্যতের আর্থিক স্বাধীনতা খর্ব করা। সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছেন—এভাবে কি দেশ চলে? দারিদ্র্য, মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ সংকট, বেকারত্ব—এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের প্রধান সম্পদ যদি বিক্রি করেই ফেলা হয়, তাহলে বাকি কী থাকবে দেশবাসীর হাতে?
‘ঋণ পরিশোধ করতে নিজের বাড়িই যদি বেচে দিতে হয়, তবে সেই পরিবার আর ঘর কি আগের মতো থাকে?’—এই প্রশ্ন এখন পাকিস্তানের প্রতিটি নাগরিকের মুখে। IMF-এর চাপ সামলাতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি একে একে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতিকে আরও অনিশ্চিত করে তুলছে। অর্থনৈতিক সংস্কার না হয়ে উঠুক ‘আত্মবিক্রয়’—এই আতঙ্কই এখন ছড়িয়ে পড়ছে গোটা পাকিস্তানে।