আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা শুধু ভারতের নয়, হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক ক্ষতির এক প্রতীক। ওই বিমানে থাকা ২৪২ জন যাত্রীর মধ্যে অনেকেই ছিলেন বিদেশি নাগরিক। সেই কারণেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডঃ এস জয়শঙ্কর দ্রুত যোগাযোগ করেছেন ব্রিটেন, কানাডা এবং পর্তুগালের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে। বিমান দুর্ঘটনার আঘাতে যখন গোটা দেশ শোকস্তব্ধ, ঠিক তখনই কূটনৈতিক স্তরে শুরু হয়ে গেছে সক্রিয় বার্তা-বিনিময়।
বিদেশমন্ত্রীর কূটনৈতিক তৎপরতা
ডঃ এস জয়শঙ্কর সামাজিক মাধ্যমে জানিয়ে বলেন, “আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার পর যুক্তরাজ্যের সেক্রেটারি অফ স্টেট ফর ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাফেয়ার্স ডেভিড ল্যামি, পর্তুগালের বিদেশমন্ত্রী পাওলো র্যাঞ্জেল এবং কানাডার ফরেন মিনিস্টার আনিতা আনন্দের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করেছি।” তিনি আরও বলেন, “আমরা গভীর শোক প্রকাশ করেছি এবং এই শোকের সময় তাঁদের পরিবার ও প্রিয়জনদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছি। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আমরা সমস্ত রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছি।”
কেন এই কূটনৈতিক যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ
আহমেদাবাদে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটিতে ছিলেন ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ এবং ১ জন কানাডিয়ান নাগরিক। একমাত্র জীবিত ব্যক্তি এক ব্রিটিশ নাগরিক, যিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত। এই পরিস্থিতিতে নিহত বিদেশি নাগরিকদের পরিবারকে সহযোগিতা করা কেবল মানবিক দায়িত্ব নয়, কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের আন্তর্জাতিক সহমর্মিতা ভবিষ্যতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিদেশি সরকারের প্রতিক্রিয়া
ব্রিটেনের তরফে ডেভিড ল্যামি টুইট করে জানিয়েছেন, “আমরা ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আমাদের নাগরিকদের মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এই শোকের সময়ে আমরা ভারতের পাশে রয়েছি।” পর্তুগাল ও কানাডার বিদেশমন্ত্রীরাও পৃথক বিবৃতি জারি করে শোকপ্রকাশ করেন ও কনস্যুলার সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছেন।
ভারতের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহায়তা
বিদেশমন্ত্রকের সূত্র অনুযায়ী, দিল্লি ও আহমেদাবাদে বিশেষ টিম গঠন করে দ্রুত কনস্যুলার সহায়তা শুরু হয়েছে। বিদেশি নাগরিকদের মৃতদেহ শনাক্তকরণ ও দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, তারা সবরকম কূটনৈতিক চ্যানেলে তথ্য ও সহায়তা দিচ্ছে এবং প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় তদন্ত রিপোর্টও ভাগ করে নেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে।
মানবিকতার পাশে কূটনীতি
এই দুর্ঘটনা আবার প্রমাণ করল, মানুষের জীবন যখন হারিয়ে যায়, তখন শুধু এক দেশের নয়—সমগ্র মানবজাতির ক্ষতি হয়। সেই ক্ষতির ক্ষতে প্রলেপ দিতে কূটনৈতিক স্তরে দ্রুত সমন্বয় ও সহানুভূতির প্রমাণ দিল ভারত।
আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের, বহু দেশের নাগরিকের। কিন্তু এই মৃত্যু যেন এক নতুন আন্তর্জাতিক সহানুভূতির জন্ম দিল। ভারতের তৎপরতা, বিদেশমন্ত্রকের কৌশলী পদক্ষেপ ও বিশ্বজনীন সমর্থনের ছবি হয়তো ভবিষ্যতে কূটনৈতিকভাবে আরও দৃঢ় করবে ভারতের অবস্থান। এই ধরনের ট্র্যাজেডি ভবিষ্যতে আর না ঘটে—সেই প্রার্থনাই আজ গোটা দুনিয়া করছে, একসাথে।
External Affairs Minister Dr S Jaishankar says, “In touch with UK’s Secretary of State for Foreign, Commonwealth and Development Affair, David Lammy, Foreign Minister of Portugal, Paulo Rangel, Minister of Foreign Affairs of Canada, Anita Anand, regarding the Ahmedabad plane… pic.twitter.com/TRnUutjHd4
— ANI (@ANI) June 13, 2025