সীমান্তে যখন টানটান উত্তেজনা, পাকিস্তানের দিক থেকে হামলার সম্ভাবনা, তখন দেশকে আকাশের মতো মিসাইল সিস্টেমই দিচ্ছে একপ্রকার ঢাল। সেই ‘আকাশ’ মিসাইল আজ দেশের গর্ব। আর এই আকাশকে গড়ে তুলেছেন যিনি, সেই ড. প্রহ্লাদ রামারাও যেন নিজের সন্তানের সাফল্যে গর্বিত এক পিতা।
প্রায় ১৫ বছর ধরে এই মিসাইল সিস্টেম তৈরির পেছনে নিরলস পরিশ্রম করেছেন তিনি। এখন যখন সেই মিসাইল সীমান্তে শত্রু নিধনে ব্যবহার হচ্ছে, তখন আবেগ চেপে রাখতে পারেননি প্রাক্তন ডিআরডিও বিজ্ঞানী। বললেন, “আমার সন্তান যেভাবে শত্রুপক্ষকে রুখছে, তাতে আমি গর্বিত।”
যুদ্ধবিমানও ধ্বংস করতে পারে আকাশ
‘আকাশ’ মিসাইল একটি স্বল্প পাল্লার সারফেস টু এয়ার মিসাইল। শত্রুর ড্রোন বা যুদ্ধবিমান ধ্বংস করতে মাটি থেকেই ছোড়া যায় এই মিসাইল। একসঙ্গে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে এটি। এমনকি ২০ কিলোমিটার দূরে থাকা লক্ষ্যবস্তুও এক মুহূর্তে উড়িয়ে দিতে পারে।
প্রত্যেকটি লঞ্চারে থাকে তিনটি করে মিসাইল। প্রতিটি মিসাইলের দৈর্ঘ্য প্রায় ৫.৮৭ মিটার, ওজন ৭১০ কেজি, আর এতে রয়েছে ৬০ কেজির বিস্ফোরক ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়ারহেড। রামারাও জানিয়েছেন, এই মিসাইল এমনকি F-16-এর মতো ফাইটার জেটও গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম।
কেন একে বলা হচ্ছে ‘দেশের সন্তান’?
এই প্রজেক্টের তরুণতম ডিরেক্টর ছিলেন রামারাও। তাঁকে এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম স্বয়ং। সেই থেকেই শুরু ‘আকাশ’-এর যাত্রা। সেই সময় অনেকেই সংশয়ে ছিলেন এই দেশীয় প্রযুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে, কিন্তু আজ তার সাফল্য চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে—ভারতও পারদর্শী। রাশিয়ার S-400 মিসাইল সিস্টেমের সঙ্গে মিলে আজ এই আকাশ গড়ে তুলেছে ভারতের নিজস্ব প্রতিরক্ষা বলয়।
আন্তর্জাতিক মঞ্চেও নজর কেড়েছে আকাশ
শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও চাহিদা বাড়ছে ‘আকাশ’-এর। আর্মেনিয়া ইতিমধ্যেই ৬০০০ কোটি টাকার একটি বড়সড় চুক্তিতে এই মিসাইল সিস্টেম কিনেছে। ভবিষ্যতে আরও দেশ এই মিসাইল ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকবে বলেই মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।
একজন বিজ্ঞানীর আবেগ, এক দেশের গর্ব
প্রহ্লাদ রামারাও এখন সত্তরের কোঠায়, কিন্তু গলায় আগের মতোই স্পষ্ট গর্বের সুর। বলছেন, “দেশকে রক্ষা করতে পারছে বলেই এ আমার সন্তানের সার্থকতা।” সেই আকাশ মিসাইল আজ যেন শুধু এক অস্ত্র নয়, এক জীবন্ত স্বপ্ন—যা গড়া হয়েছিল বিজ্ঞান, নিষ্ঠা আর ভালবাসা দিয়ে।