Border Security : অসমের শান্ত, সবুজে মোড়া দাররাঙ্গা পাহাড়ের কোলে হঠাৎই একরাশ গর্জনে কেঁপে উঠল আকাশ। কারণ, সেখানে শুরু হয়েছে অসম রাইফেলস-এর লাইভ ফায়ার ড্রিল। এই রকম তাজা আগুনে মহড়া শুধু অস্ত্র পরীক্ষা নয়, বরং এক ধরনের বার্তাও—দেশের সীমান্ত কতটা সুরক্ষিত, তারই এক প্রমাণ।
দাররাঙ্গা ফায়ারিং রেঞ্জে বিপুল তৎপরতা
দাররাঙ্গা ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জ—অসমের সামরিক মহলের কাছে বহু পুরনো এবং গুরুত্বপূর্ণ এক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানে নিয়মিতই চলে ট্রেনিং, তবে এইবারের তৎপরতা ছিল আরও উচ্চমাত্রার। মূলত ‘কি সাপোর্ট’ অস্ত্র, অর্থাৎ যুদ্ধের সময় সেনাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করা ভারী অস্ত্রের পরীক্ষা চালানো হয়। মর্টার, এলএমজি (লাইট মেশিন গান), অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইলের মতো অস্ত্র ব্যবহৃত হয় এই মহড়ায়। প্রতিটি ইউনিটই আলাদা করে তাদের অস্ত্রের নিখুঁত ব্যবহার এবং নিখুঁত লক্ষ্যে আঘাত করার ক্ষমতা প্রদর্শন করে।
“তৈরি আমরা”—বার্তা দেশের নিরাপত্তার জন্য
অসম রাইফেলস-এর তরফে জানানো হয়েছে, এই মহড়ার উদ্দেশ্য শুধুই ট্রেনিং নয়, বরং পুরো বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য সর্বদা প্রস্তুত রাখা। যেকোনও সময়, যেকোনও পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম হতে হবে—এই মনোভাবেই গড়ে উঠছে বাহিনীর প্রতিটি সদস্য। এক আধিকারিক জানান, “আমরা শান্তি চাই, কিন্তু তার মানে এই নয় যে প্রস্তুত নই। দাররাঙ্গা রেঞ্জের এই মহড়া দেখাচ্ছে, আমরা সবসময় প্রস্তুত।”
সীমান্ত এলাকায় বাড়তি সতর্কতা?
এই মহড়া এমন এক সময়ে চালানো হল, যখন উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু জেলায় বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের খবর মাঝে মাঝেই সামনে আসে। যদিও সেনাবাহিনী বা অসম রাইফেলস সরাসরি কোনও নিরাপত্তা হুমকির কথা বলেনি, তবুও এই ধরণের মহড়া যে কৌশলগত বার্তা দেয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দাররাঙ্গা রেঞ্জের কাছাকাছি রয়েছে ভুটান সীমান্ত, এবং খুব দূরে নয় অরুণাচলপ্রদেশও। ফলে এই অঞ্চলে সেনা প্রস্তুতি এবং অস্ত্র দক্ষতার পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে শান দেওয়া হচ্ছে প্রতিটি সৈনিককে
বাহিনীর মুখপাত্রদের মতে, লাইভ ফায়ার এক্সারসাইজ কেবলমাত্র অস্ত্র চালানোর ক্ষমতা নয়, বরং মানসিক স্থৈর্য, লক্ষ্য নির্ধারণ, পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এবং দলগত সমন্বয়—সবকিছুর এক জটিল পরীক্ষা। এছাড়াও, পরিবেশগত পরিস্থিতি বুঝে যুদ্ধের উপযুক্ত কৌশল তৈরি করাও এই প্রশিক্ষণের অংশ। ঘন জঙ্গল, অসমান ভূমি, প্রকৃতির সব চ্যালেঞ্জকেই বাস্তব মনে করে মহড়া করা হয়।
জনগণের আস্থা ও সেনার দায়িত্ব
অসম রাইফেলস শুধু এক সেনাবাহিনী নয়, বরং উত্তর-পূর্বের বহু প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাধারণ মানুষের সঙ্গেও যোগাযোগে থাকে। চিকিৎসা শিবির, স্কুল, ত্রাণ—সব ক্ষেত্রেই তাদের ভূমিকা আছে। তাই এই ধরনের মহড়া শুধু বাহিনীর শক্তি দেখানোর চিত্র নয়, বরং জনগণের মধ্যে একটা নিরাপত্তার অনুভূতি ছড়িয়ে দেয়।
দাররাঙ্গা রেঞ্জে অসম রাইফেলস-এর এই অস্ত্র মহড়া নিঃসন্দেহে দেখিয়ে দিল, দেশের সীমান্ত শুধু পাহারা নয়, প্রস্তুতিও কতটা গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর-পূর্ব ভারতের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা মাথায় রেখে, এই ধরণের তৎপরতা ভবিষ্যতের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলিকে রুখে দেওয়ার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
Troops of the Assam Rifles carried out firing of key support weapons at Darranga Field Firing Range in Assam. Regular firing exercises at Darranga are integral to maintaining high levels of operational readiness. These weapons play a vital role in enhancing the Force’s combat… pic.twitter.com/5oOFNNbi0P
— ANI (@ANI) June 14, 2025