সম্প্রতি দীঘায় উদ্বোধন হয়েছে জগন্নাথ মন্দির। এখন জগন্নাথের দর্শনের জন্য আর পুরি যাওয়ার দরকার পড়বে না, বাঙালি এখন দীঘাতেই দর্শন পাবে স্বয়ং জগন্নাথ দেবের। মাত্র দু সপ্তাহ হয়েছে মন্দিরটি উদ্বোধন হয়েছে আর তাতেই ঘটে গেছে এক বিস্ময়। মন্দির কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, মাত্র দু’সপ্তাহে ৯ লক্ষ টাকার প্রণামী জমা পড়ল দিঘার নতুন জগন্নাথ মন্দিরে। এতটাই ভিড় হচ্ছে, যে একটিমাত্র প্রণামীর বাক্স দিয়ে আর কাজ হচ্ছে না—তাই তৈরি হচ্ছে আরও ১০টি বাক্স!
প্রতিদিন লাখ লাখ দর্শনার্থী ভিড় জমাচ্ছে
৩০ এপ্রিল অক্ষয় তৃতীয়ার দিন দিঘার এই বিশাল জগন্নাথ মন্দিরের দ্বার খুলেছিল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। তারপর থেকেই যেন মানুষের ঢল নেমেছে সেখানে। প্রথম চার দিনেই ১০ লক্ষের বেশি মানুষ এসে গিয়েছেন মন্দিরে। জগন্নাথ দেব কে দেখে খুশি মনে প্রত্যেকে দক্ষিণা দিয়েছে প্রণামী বাক্সে। সেদিন থেকে আজ দিঘা মন্দিরের উদ্বোধনের পঞ্চদশ দিনে এসে প্রণামীর অঙ্ক ছাড়িয়েছে ৯ লক্ষ টাকা!
ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে চলছে টাকা গোনা
মন্দিরে এখন আছে মাত্র একটি প্রণামীর বাক্স। এত ভিড় হচ্ছে, যে অনেকে চাইলেও সেই বাক্স পর্যন্ত পৌঁছতে পারছেন না। ফলে নতুন করে আরও ১০টি স্টিলের বাক্স বানানোর অর্ডার দেওয়া হয়েছে। বাক্সগুলিতে থাকবে দুটি করে তালা, রাখা হবে মন্দিরের নানা প্রান্তে। লক্ষ্য, সবাই যাতে সহজে প্রণামী দিতে পারেন।
এক দিনে ৭ ঘণ্টা ধরে চলেছে টাকা গোনা, ১.২৫ লক্ষ শুধু কয়েনে!
ইস্কন কলকাতার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জগন্নাথধাম ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য রাধারমণ দাস জানাচ্ছেন, গত মঙ্গলবার ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত টানা ৭ ঘণ্টা ধরে চলে টাকা গোনা। শুধু কয়েনেই উঠে এসেছে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা! এছাড়াও রয়েছে বিপুল পরিমাণ ১০ ও ২০ টাকার নোট। সব কিছুই হচ্ছে কড়া নজরদারিতে—সিসিটিভি ক্যামেরা, প্রশাসনিক আধিকারিক, ব্যাঙ্কের কর্মী, ইস্কনের সন্ন্যাসী ও স্বেচ্ছাসেবকদের উপস্থিতিতে।
দর্শনার্থীর ভিড় সামলাতে বাড়ানো হচ্ছে ভলান্টিয়ার
মন্দিরে এমন ভিড় হচ্ছে যে, পুলিশের পাশাপাশি সিভিক ভলান্টিয়ারদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই রাজ্য মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে বিশেষভাবে মন্দিরের জন্য ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। দিঘা ও রামনগর এলাকার বাসিন্দারাই এই পদে আবেদন করতে পারবেন।
এতদিন ছুটি কাটাতে মানুষ দীঘায় যেত শুধুমাত্র সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। কিন্তু এখন থেকে দীঘা মানুষের কাছে এক অন্যতম আকর্ষণ। সেই আকর্ষণ হল দীঘার জগন্নাথ মন্দির। দিঘার এই জগন্নাথ মন্দির এখন শুধু একটি মন্দির নয়—এটা হয়ে উঠছে এক বিশাল পর্যটনকেন্দ্র, স্থানীয় অর্থনীতির চালিকাশক্তি এবং লাখো মানুষের বিশ্বাসের কেন্দ্র।