Digital Arrest : ২০২৩ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে অবসর নেওয়া প্রবীণ চিকিৎসক উৎপলকুমার বিট এক ভয়ঙ্কর প্রতারণার ফাঁদে পড়েন। ২০২৪ সালের ৯ নভেম্বর তিনি সার্ভে পার্ক থানায় অভিযোগ দায়ের করেন—অজানা নম্বর থেকে ফোনে তাঁকে জানানো হয়, তাঁর নামে একাধিক বেআইনি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে এবং মুম্বই পুলিশ ও সিবিআই তাঁর খোঁজ করছে। ফোনের ওপ্রান্তে থাকা প্রতারক নিজেকে মুম্বই পুলিশের অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেন—চিকিৎসককে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করা হবে। তাঁর আশপাশে নাকি ইতিমধ্যেই ‘সাদা পোশাকে’ পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এক কোটি টাকা না পাঠালে সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া হবে।
ভয়েই খুইয়ে দেন সারা জীবনের সঞ্চয়
ভীত-সন্ত্রস্ত উৎপলবাবু পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়ে ফোনে দেওয়া নির্দেশ মতো তিনটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেন মোট ১ কোটি টাকা। কয়েক দিন পরেই বুঝতে পারেন, পুরো ঘটনাটিই একটি ফাঁদ ছিল।
পুলিশের তৎপরতায় ফিরে এল ৩০ লক্ষ টাকা
অভিযোগ পাওয়ার পর কলকাতা পুলিশের সাইবার শাখা তদন্তে নামে। গোয়েন্দারা টাকা ট্র্যাক করে যে অ্যাকাউন্টগুলিতে তা পাঠানো হয়েছিল, সেগুলি অবিলম্বে ব্লক করে দেন। দীর্ঘ সাত মাসের তদন্তের পর অবশেষে ৩০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে ফেরত দেওয়া হয় উৎপলবাবুকে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বাকি ৭০ লক্ষ টাকাও ফেরত দেওয়ার চেষ্টা চলছে। বেশিরভাগ টাকাই ঘুরপথে পাচার করা হয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে।পরপর ধরা পড়ল ছয়জন। প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয় সুরজকুমার সিং, আরমান আখতার খান ও মহম্মদ জহিনউদ্দিন নামে তিনজনকে। এরপর বৃহস্পতিবার উত্তর শহরতলির লেক টাউন এবং বাঙুর থেকে আরও তিনজন—সুব্রত মল্লিক, পঙ্কজ মল্লিক ও বিষ্ণু আগরওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্তে উঠে আসে, এই চক্র একটি অফিস চালাত বাঙুর অ্যাভিনিউতে। সেখান থেকে বাজেয়াপ্ত হয় পাঁচটি মোবাইল, একাধিক ল্যাপটপ, টাকা গোনার মেশিন, চেকবই এবং নগদ প্রায় ২৯ লক্ষ টাকা।
চমকে দেওয়া তথ্য: টাকা গিয়েছে ক্রিপ্টো অ্যাকাউন্টে
পুলিশের সন্দেহ, এই চক্র বহু মানুষকে একই পদ্ধতিতে প্রতারণা করেছে এবং তোলা টাকা দ্রুত ট্রান্সফার করে দিত ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে। অর্থাৎ, প্রযুক্তি ব্যবহার করেই অপরাধকে আড়াল করার চেষ্টা করা হতো। আরও জানা গিয়েছে, মূলত আরমানই দেখাশোনা করত প্রতারকের একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, যেগুলি ব্যবহার করা হতো কালো টাকা লেনদেনের জন্য।
সতর্ক থাকুন! ডিজিটাল প্রতারণা রুখতে আপনিই প্রথম রক্ষাকবচ
এই ঘটনার পর পুলিশ সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে বলেছে—মুম্বই পুলিশ, সিবিআই বা অন্য কোনও সরকারি সংস্থা কখনওই ফোনে কাউকে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করে না। কোনও আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে এমন ফোন পেলে সঙ্গে সঙ্গে কাছাকাছি থানায় বা সাইবার সেলে জানান।
উল্লেখ্য, সাধারণ নাগরিকদের সাইবার জালিয়াতি থেকে রক্ষা করতে গেলে আরও সচেতনতা, প্রযুক্তিগত নজরদারি এবং দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন—এটাই বার্তা দিচ্ছে কলকাতা পুলিশের এই সফল উদ্ধার অভিযান।