Earth Tilt : আন্তর্জাতিক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন এক বিস্ময়কর তথ্য, যা শুনে রীতিমতো আঁতকে উঠছেন বিজ্ঞানী মহল। বলা হচ্ছে, মানুষ যতটা ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করছে, তা এখন আর শুধু পরিবেশ নয়, পৃথিবীর মেরু ঘূর্ণনের উপরও সরাসরি প্রভাব ফেলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গত ২০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর ঘূর্ণন অক্ষ প্রায় ৮০ সেন্টিমিটার পূর্বদিকে সরেছে। এবং এই পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম প্রধান ভূমিকা নিয়েছে ভারত—বিশেষত দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, পঞ্জাব এবং হরিয়ানার লাগাতার ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন।
কী বলছে গবেষণা?
প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটারে (Geophysical Research Letters)। গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ১৯৯৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত মানুষ ২,১৫০ গিগাটন ভূগর্ভস্থ জল তুলে নিয়েছে। যার প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে প্রায় ৬ মিলিমিটার।
এই জল কোথায় যায়? গবেষকরা বলছেন, একবার ভূগর্ভ থেকে জল বের হলে তা শেষ পর্যন্ত সাগর বা নদীতে মিশে যায়। আর সেখান থেকেই ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে পৃথিবীর ঘূর্ণন অক্ষ।
কেন ভারতের দিকে আঙুল?
দুটি অঞ্চল এই বিপদের কেন্দ্রে—আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিম ভারত। পঞ্জাব ও হরিয়ানার চাষবাস-নির্ভর জনজীবনে ভূগর্ভস্থ জলের ওপর নির্ভরতা অত্যধিক। ফলত জলস্তর ক্রমশ নামছে, যা পৃথিবীর ভরবন্টনে পরিবর্তন ঘটাচ্ছে।
সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভূ-পদার্থবিদ ওয়েন সিও, যিনি এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন, জানিয়েছেন—এই বিপুল পরিমাণ জল উত্তোলন পৃথিবীর রোটেশনাল পোল বা ঘূর্ণন অক্ষে সরাসরি চাপ ফেলেছে।
কী হতে পারে পরিণতি?
বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবীর ঘূর্ণন অক্ষে সামান্য পরিবর্তন হলেও দীর্ঘমেয়াদে এর ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়তে পারে—জলবায়ুতে চরম পরিবর্তন, মরসুমি বৈচিত্র্য, এমনকি প্রাকৃতিক দুর্যোগও বৃদ্ধি পেতে পারে। দক্ষিণ গোলার্ধ এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলে উষ্ণতা বাড়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না গবেষকরা।
উপায় কী?
- ভূগর্ভস্থ জলের উপর নির্ভরতা কমানো
- রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং বাড়ানো
- বিকল্প কৃষিপদ্ধতির প্রয়োগ
- সরকারি নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ
উল্লেখ্য, আমরা প্রতিনিয়ত পরিবেশের ওপর যে চাপ সৃষ্টি করছি, তার পরিণতি যে কত ভয়াবহ হতে পারে, এই গবেষণা সেই চিত্রটাই তুলে ধরেছে। পৃথিবী হেলে পড়ছে, আর আমরা সেটা টেরও পাচ্ছি না।