Flight Cancelled : ইরান ও ইজ়রায়েলের মধ্যে চলতে থাকা ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবার আছড়ে পড়ল সাধারণ মানুষের যাতায়াতের উপর। ইজ়রায়েলের রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থা এল অল (El Al) এক ধাক্কায় ঘোষণা করে দিল, আগামী বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন পর্যন্ত তারা সমস্ত যাত্রীবাহী ফ্লাইট বাতিল করছে। এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এল, যখন রবিবার দিনভর একাধিক সামরিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতি। যুদ্ধের আশঙ্কায় ইজ়রায়েল দেশটির আকাশসীমাও বন্ধ করে দেয় মঙ্গলবার পর্যন্ত। তবে রবিবার পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে নেওয়া হয় নতুন এই পদক্ষেপ।
নিরাপত্তার খাতিরে বড় সিদ্ধান্ত
এল অল সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ইজ়রায়েলের নিরাপত্তা ও পরিবহন মন্ত্রক থেকে যে সতর্কবার্তা এসেছে, তার ভিত্তিতেই এই কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, সংস্থার সহকারী শাখা সুন্দর (Sundor)-এর ফ্লাইটগুলিও বাতিল করা হয়েছে। তবে বিমান সংস্থার দাবি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা ধাপে ধাপে পুনরায় বিমান পরিষেবা চালু করবে। সেইসঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব বিদেশে আটকে পড়া ইজ়রায়েলি নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার বিশেষ উদ্ধারকারী ফ্লাইট পরিচালনার আশ্বাসও দিয়েছে এল অল।
ইউরোপগামী ফ্লাইটেও প্রভাব
শুধু ইজ়রায়েল নয়, সংঘর্ষের আঁচ পড়েছে ইউরোপের দিকেও। এল অল জানিয়েছে, তারা ২৩ জুন পর্যন্ত ইউরোপের বেশ কয়েকটি গন্তব্যে ফ্লাইট বাতিল করেছে। যার মধ্যে রয়েছে প্যারিস, লন্ডন, রোমের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরও। এতে বহু যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। যাঁদের আগে থেকেই টিকিট কাটা ছিল, তাঁদের হয় ফ্লাইট পরিবর্তনের বিকল্প দেওয়া হচ্ছে, নয়তো সম্পূর্ণ অর্থ ফেরতের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
সীমান্ত খোলা, কিন্তু ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা
যদিও ইজ়রায়েল-মিশর ও জর্ডান সীমান্ত এখনো খোলা, তবুও ইজ়রায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (NSC) স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে—এই সময় ওই অঞ্চলগুলিতে ভ্রমণ একেবারেই নিরাপদ নয়। বিদেশে অবস্থানকারী নাগরিকদের দ্রুত দেশে ফেরার পরামর্শও দিয়েছে তারা। এক্ষেত্রে যাঁরা দেশে ফিরতে চাইছেন, তাঁদের ইজ়রায়েলের পরিবহন দপ্তরের অনুমোদন ও নির্দেশের দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে।
অতীত থেকে শিক্ষা
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের পর থেকে ইজ়রায়েলের একমাত্র সক্রিয় বিমান সংস্থা ছিল এল অল। গাজ়া-ইজ়রায়েল সংঘর্ষের জেরে সেই সময় অধিকাংশ আন্তর্জাতিক সংস্থা তেল আভিভে বিমান পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছিল। সেখান থেকেই শিক্ষা নিয়ে আরও একবার বিমান বাতিলের পথে হাঁটল এল অল। বর্তমানে যখন ইরান ও ইজ়রায়েলের সংঘাত আরও ভয়াবহ আকার নিচ্ছে, তখন এই ধরণের প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কিত করছে বিশ্ববাসীকে। কারণ, এই যুদ্ধ শুধুমাত্র এই দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না—তাতে জড়িয়ে পড়তে পারে গোটা মধ্যপ্রাচ্য এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্ক।
ফ্লাইট বাতিল শুধু একখানা ট্রিপ মিস নয়—এর সঙ্গে জুড়ে আছে হাজার হাজার যাত্রীর নিরাপত্তা, পরিবারে ফেরার অপেক্ষা ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির অস্থিরতা। এল অলের এই সিদ্ধান্ত যে কতটা গভীর সংকেত বহন করে, তা আজকের পরিস্থিতিতে আর আলাদা করে বলে দিতে হয় না। এই মুহূর্তে বিশ্ববাসীর একটাই চাওয়া—শান্তি ফিরুক দ্রুত, এবং যুদ্ধের কালো মেঘ যেন কেটে যায় আকাশ থেকে।
Following developments in the security situation and in accordance with the decision of the relevant security and transportation authorities, the EL AL and Sundor flight schedule is canceled through Thursday, June 19, 2025.
Additionally, as of this time and based on current… pic.twitter.com/mk7q0Gshmj
— EL AL USA (@ELALUSA) June 15, 2025