সোনার দামে আবারও উত্তাল ভারতের বাজার। বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০২৫-এর সকালে দেখা গেল, ২৪ ক্যারেট সোনার দাম দাঁড়িয়েছে প্রতি গ্রাম ₹১০,১০৯, যা আগের দিনের তুলনায় ₹১ বেশি। শুধু তাই নয়, ২২ ক্যারেটের দাম ₹৯,২৬৬ এবং ১৮ ক্যারেটের দাম ₹৭,৫৮২। এক টুকরো ধাতুর এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে আসলে কী রয়েছে?
সোনার দর বৃদ্ধির পেছনে বিশ্ব অর্থনীতি
বিশ্ববাজারে মার্কিন ডলার দুর্বল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সোনার চাহিদা বেড়ে যায়। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমানোর ইঙ্গিত দেওয়ায়, বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে আবারও ঝুঁকছেন সোনার দিকে। ভারত তার প্রভাব সরাসরি অনুভব করছে। ফলে দেশীয় বাজারেও সোনার দাম বাড়ছে।
দেশীয় বাজারে চাহিদা বেড়েছে
এ বছর জুন মাসের শুরু থেকেই ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে সোনার দাম। শ্রীধর জুয়েলার্সের কর্ণধার সমীরণ ঘোষ জানাচ্ছেন, “অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিয়ের মৌসুম ও উৎসবের মরশুম মাথায় রেখে বহু মানুষ এখনই সোনা কিনছেন। ভবিষ্যতে দাম আরও বাড়তে পারে—এই আশঙ্কায় আগেভাগেই কিনে রাখছেন সবাই।”
বিনিয়োগকারীদের জন্য সুখবর, না আতঙ্ক?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দাম বৃদ্ধি মূলত স্বর্ণের ‘হেজ অ্যাগেইনস্ট ইনফ্লেশন’ মানসিকতাকে আরও জোরালো করছে। বহু মানুষ এখন স্টক মার্কেট বা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের বদলে আবার সোনার দিকেই ঝুঁকছেন। সোনার ETF (Exchange Traded Fund) বা ডিজিটাল গোল্ডেও বিনিয়োগের পরিমাণ দ্রুত বেড়েছে। অর্থনীতিবিদ দীপঙ্কর দে বলেন, “সোনা এখন আর শুধু অলঙ্কার নয়, এটা একটা সম্পদ। বাজার যতই ওঠানামা করুক, সোনা দীর্ঘমেয়াদে নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ।” তাঁর কথায়, “যারা এখনই সোনা কিনতে চাইছেন, তাঁদের উচিত পরিকল্পনা করে ধাপে ধাপে কেনা।”
রুপো ও প্ল্যাটিনামের অবস্থান কী?
শুধু সোনাই নয়, রুপো ও প্ল্যাটিনামের দামও ঊর্ধ্বমুখী। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, রুপোর দাম বেড়ে হয়েছে প্রতি কেজি ₹১,৩০,৫০০ এবং প্ল্যাটিনাম প্রতি গ্রাম ₹৪৫৪৮। যদিও এই দামের ওঠানামা সোনার মতো রেকর্ড ছোঁয়নি, তবু বাজারে চাহিদা প্রবল।
আগামী দিনে কী হবে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ে অথবা ডলারের আরও পতন হয়, তাহলে সোনার দাম আরও বাড়তে পারে। বিশেষত, ভারতের মতো দেশে যেখানে সোনা সামাজিকভাবে এক ধরনের ‘সম্পদ’ হিসেবে দেখা হয়, সেখানে এর চাহিদা রয়ে যাবে চিরকালীন।
সোনার দামে এই উল্লম্ফনের সময় সাধারণ গ্রাহকদের সতর্কভাবে এগোনোর পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থ বিশেষজ্ঞরা। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলে সোনা কেবল অলঙ্কার নয়, হয়ে উঠতে পারে ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তার সেরা হাতিয়ার।