গতকাল অরুণাচল প্রদেশের লোয়ার দিবাং ভ্যালি জেলার বমজির নদীতে ঘটে গেল এক চরম মানবিক বিপর্যয়। আকস্মিক বন্যার জেরে নদীর মাঝামাঝি অংশে আটকে পড়েন ১৪ জন স্থানীয় মানুষ। চারদিক জলেঘেরা, কোনো রাস্তাঘাট নেই, মোবাইল সিগন্যালও প্রায় নেই—মনে হচ্ছিল যেন প্রকৃতির কাছে হার মানতে বসেছে জীবন।
দ্রুত প্রতিক্রিয়ায় উদ্ধার অভিযানে নামল বায়ুসেনা
আসাম ও অরুণাচল প্রদেশের প্রশাসনের তরফে যখন কেন্দ্রীয় স্তরে সাহায্যের অনুরোধ পাঠানো হয়, তখনই তৎপর হয়ে ওঠে ভারতীয় বায়ুসেনা। কিছুক্ষণের মধ্যেই গৌহাটি থেকে ওড়ে Mi-17 হেলিকপ্টার। বায়ুসেনার তত্ত্বাবধানে শুরু হয় এক নিখুঁত ও ঝুঁকিপূর্ণ উদ্ধার অভিযান।
Mi-17 হেলিকপ্টারের অসাধারণ দক্ষতা
পাহাড়ি অঞ্চলে প্রবল বাতাস এবং মেঘলা আকাশের মধ্যেই Mi-17 হেলিকপ্টার পৌঁছে যায় দুর্গম বমজির নদীর উপর। নীচে তখন ভেসে আছে আটকে পড়া মানুষজন—কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসে, কারও শরীরে কাদা লেগে, কারও চোখে আতঙ্ক। হেলিকপ্টার নামিয়ে একে একে সবাইকে তুলে নেওয়া হয় নিরাপদ স্থানে।
উদ্ধারপর্বের সময় যেন থমকে ছিল সময়
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, প্রায় এক ঘণ্টার এই অভিযানে একে একে ১৪ জনকে জীবনের নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেন বায়ুসেনার সাহসী সদস্যরা। উদ্ধার হওয়া এক ব্যক্তি বলেন, “আমরা প্রায় ভেবেই নিয়েছিলাম শেষ। হঠাৎ আকাশে হেলিকপ্টার দেখে মনে হয়েছিল, ঈশ্বর যেন স্বয়ং ধেয়ে এসেছেন।”
প্রশংসায় ভাসছে বায়ুসেনার তৎপরতা
ডিফেন্স পিআরও গৌহাটি অফিস থেকে জানানো হয়েছে, এই উদ্ধার কাজ ছিল “ক্রিটিক্যাল হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড ডিজাস্টার রিলিফ মিশন”। স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে বায়ুসেনা অবিলম্বে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে এবং প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে।
মানবতার মিশন সফল, আরও প্রস্তুতির আহ্বান
এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠছে—বন্যা প্রবণ এলাকাগুলিতে পর্যাপ্ত সতর্কতা ও উদ্ধার সরঞ্জামের কি যথেষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে? রাজ্য ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে এমন দুর্গম এলাকায় আরও আগাম প্রস্তুতি থাকা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য, মৃত্যুর মুখ থেকে ১৪টি প্রাণকে টেনে আনা এই অপারেশন কেবল একটি উদ্ধার নয়—এ এক সাহস, প্রযুক্তি ও মানবিকতার মিশ্রণ। প্রকৃতির বিপর্যয়ের মাঝেও দাঁড়িয়ে পড়া বায়ুসেনার এই ভূমিকা সত্যিই প্রশংসনীয়।