দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপের মধুসূদনপুর। শান্ত একটি পঞ্চায়েত এলাকা। কিন্তু সোমবার আচমকাই যেন যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে উঠল। তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের উপর চলে বেধড়ক হামলা। অভিযোগ, বহিরাগত দুষ্কৃতীরা আচমকাই চড়াও হয় পঞ্চায়েত অফিসে। তখন সেখানে চলছিল ত্রাণ বিলি সংক্রান্ত একটি বৈঠক। স্থানীয় সূত্রে খবর, কোনও পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সেখানে ঢুকে পড়ে একদল দুষ্কৃতী। তারা পঞ্চায়েত অফিসের ভিতরে ঢুকে তৃণমূল কর্মীদের একাংশকে লক্ষ্য করে মারধর শুরু করে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে কোনও কিছু বোঝার আগেই রক্তাক্ত হয়ে পড়েন অন্তত ৬ জন।
গুরুতর আহত ৩ জন, একজন পঞ্চায়েত সদস্যার ছেলে
এই ঘটনায় ৬ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৩ জনের আঘাত গুরুতর, যাঁদের কাকদ্বীপ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় পঞ্চায়েতের এক সদস্যার ছেলে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত যুবক সম্পূর্ণ নির্দোষ, তিনি শুধু মায়ের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। হামলার তীব্রতা দেখে অনেকেই আতঙ্কে দৌড়ে পালান।
দলীয় গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব? উঠে এল পরিচিত নাম
প্রথমে বহিরাগতদের দুষলেও, পরে জানা যাচ্ছে তৃণমূলের মধ্যেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এই হামলার নেপথ্যে। জেলা পরিষদের সদস্যা রিনা দাসের অনুগামীদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এই হামলার পিছনে যাঁর অনুগামীদের নাম উঠে এসেছে, তিনি হলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সুন্দরবন সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবাশিস দাস। যদিও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের একাংশ মুখ খোলার সাহস না করলেও অনেকেই জানিয়েছেন, “দলের মধ্যেই ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে সমস্যা রয়েছে, এটা সবাই জানে।”
থানায় অভিযোগ, পুলিশ মোতায়েন, তবু আতঙ্ক
ঘটনার পর তৃণমূলের স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। পাশাপাশি, পঞ্চায়েত অফিসের বাইরে মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। কিন্তু তাতে আতঙ্ক কমছে না। গ্রামের মানুষজন বলছেন, “আমরা রাজনীতি বুঝি না, কিন্তু পঞ্চায়েত অফিসের ভেতরে এমন হামলা হলে সাধারণ মানুষের কী হবে?” রিনা দাসের অভিযোগ, “এটা একেবারে পরিকল্পিত হামলা। যারা করেছে, তারা কেউ সাধারণ মানুষ নয়, এরা সব দুষ্কৃতী।”
বিজেপির কটাক্ষ: ভাগ-বাটোয়ারার লড়াই
পুরো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ খুলেছে বিজেপিও। এক নেতার কটাক্ষ, “ত্রাণ নিয়ে নিজেদের মধ্যেই ভাগ-বাটোয়ারা ঠিক করতে না পেরে এখন মারামারি শুরু করেছে তৃণমূল। সাধারণ মানুষের কথা ভাবার সময় নেই ওদের।”
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে অশনি সংকেত তৃণমূলে?
পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকেই একাধিক এলাকায় দেখা যাচ্ছে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ। এই ঘটনা সেই একই ধারারই অংশ কি না, তা সময়ই বলবে। তবে এই ঘটনায় ফের একবার সামনে চলে এল, তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব এখনও নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।