Kaliganj Bypoll : বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নদিয়ার কালীগঞ্জে ভোট। কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুর, বুথগুলো এখনও অবধি কার্যত ফাঁকা। বৃষ্টি ও আর্দ্র আবহাওয়া মানুষের উৎসাহে কিছুটা জল ঢেলেছে বলেই মনে করছেন স্থানীয় বিশ্লেষকরা। তবে শুধুই আবহাওয়া নয়, মানুষের এই নির্লিপ্ততার পেছনে রাজনীতির জটিল অঙ্কও লুকিয়ে থাকতে পারে। কারণ এই উপনির্বাচনের কার্যকাল এক বছরের কম হলেও এর রাজনৈতিক তাৎপর্য যে অনেক গভীর, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
উপনির্বাচনে ত্রিমুখী সংঘাত, চাপে রাজনৈতিক দলগুলি
এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী করেছে প্রয়াত বিধায়ক নাসিরউদ্দিন আহমেদের মেয়ে আলিফা আহমেদ-কে। সহানুভূতির ঢেউ কতটা কার্যকর হয়, তা এই ভোটেই প্রমাণ হবে। অন্যদিকে বিজেপির প্রার্থী আশিস ঘোষ, যিনি আগেও একাধিক বার মাঠে নেমেছেন। তাঁর সঙ্গে সম্মিলিত লড়াইয়ে নামছে বাম-কংগ্রেস জোট, যাদের প্রার্থী কাবিলউদ্দিন শেখ। এই তিনটি শিবিরের কাছে এই ভোট শুধুই এক আসন দখলের লড়াই নয়, বরং পরবর্তী বিধানসভা ভোটের আগে নিজের ঘর গোছানোর পরীক্ষা।
ভোটার নেই! কী বার্তা দিচ্ছে ফাঁকা বুথ?
সকাল সাতটা থেকে ভোট শুরু হলেও অধিকাংশ বুথ ছিল কার্যত শুনশান। দু-একটি বুথে ব্যতিক্রম বাদ দিলে, মানুষের মুখে ভোট নিয়ে বিশেষ আগ্রহ চোখে পড়ছে না। গত ক’দিন ধরে টানা বৃষ্টি, রাস্তাঘাটের দুরবস্থা—সব মিলিয়ে অনেকেই ঘরছাড়া হতে চাইছেন না। বিশেষত মহিলাদের অংশগ্রহণ একেবারেই কম। তবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নেওয়া ব্যবস্থাগুলি যথেষ্ট সন্তোষজনক বলেই জানাচ্ছেন পোলিং এজেন্টরা। কেউ কেউ বলেন, “অন্যান্যবারের তুলনায় এইবার সিসিটিভি, নিরাপত্তা, ও বুথের ভেতরের পরিবেশ অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত।”
কেন এই উপনির্বাচন, আর কেন এত গুরুত্বর?
এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রয়াত হন তৃণমূল বিধায়ক নাসিরউদ্দিন আহমেদ। সেই শূন্যস্থান পূরণ করতেই এই উপনির্বাচন। কার্যকালের দিক থেকে সময় খুব বেশি নেই, হয়তো এক বছরেরও কম। তবু এই ভোট ঘিরে রাজনীতির উত্তাপ এতটাই বেশি কারণ—২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে জনমত যাচাই, স্থানীয় সংগঠনকে চাঙ্গা করা, এবং বিরোধী শক্তির শক্তি ও দুর্বলতা বোঝার এর চেয়ে বড় সুযোগ আর হয় না। তৃণমূল যেখানে চাইছে নিজেদের দখল ধরে রাখতে, বিজেপি সেখানে নিজের মাটি শক্ত করতে মরিয়া। আর বাম-কংগ্রেস জোট এই প্রথমবার প্রার্থী দাঁড় করিয়ে চমক দিতে চাইছে। যদিও ভোটদানের হার এখনও পর্যন্ত আশানুরূপ নয়, তবু রাজনৈতিকভাবে এই উপনির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে সব পক্ষের কাছেই। দিন শেষে মানুষের রায়ই শেষ কথা—কিন্তু সেই মানুষ আজ বুথে আসছেন না।
কালীগঞ্জ হয়তো একটাই কেন্দ্র, কিন্তু এর ভোট যেন গোটা বাংলা রাজনীতির প্রেক্ষাপট আঁকছে—কে কোথায় দাঁড়িয়ে, কে কতটা এগিয়ে, আর কে কতটা পিছিয়ে পড়েছে। বেলা যত গড়াবে, ভোটারদের ভিড় বাড়বে কি না, সেই দিকেই তাকিয়ে এখন সব পক্ষই।