ঘটনাটি ঘটেছে এক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে, যেখানে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বিরুদ্ধে শিখ পুলিশ অফিসারের দিকে হাওয়াই চটি ছোড়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি সামনে আসতেই শুরু হয়ে যায় রাজনৈতিক চাপানউতোর।
ঘটনার প্রেক্ষিতে কলকাতা পুলিশের তরফে ইতিমধ্যেই সুকান্ত মজুমদারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। যদিও বিজেপির তরফে অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনৈতিক চক্রান্ত।
মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষে ছ্যাঁকা রাজ্য রাজনীতি
সোমবার এই প্রসঙ্গে প্রথমবার সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দৃশ্যত ক্ষুব্ধ মমতা বলেন, “হাওয়াই চটি যদি এতই প্রিয় হয়, তাহলে হাওয়াই চটির দোকান খুলে ফেলুন।” তাঁর মন্তব্যে উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে হাসির রোল উঠলেও, রাজনীতির ময়দানে তা ছড়িয়ে পড়ে আগুনের মতো।
তিনি আরও বলেন, “একজন শিখ অফিসারের প্রতি এমন অবমাননাকর আচরণ বরদাস্ত করা যায় না। যারা পুলিশের গায়ে হাত তোলে, তাদের শাস্তি হবেই। আমি প্রশাসনকে বলেছি, কঠোর পদক্ষেপ নিতে।”
বিতর্কের কেন্দ্রে সুকান্ত, বিজেপির পালটা
ঘটনায় অভিযুক্ত সুকান্ত মজুমদার অবশ্য বলছেন, “আমি কারও দিকে ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু ছুঁড়িনি। এটা নাটক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ আমার পিছনে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
বিজেপি সূত্রে আরও দাবি করা হয়েছে, চটি ছোড়ার ঘটনাটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিকৃত করে দেখানো হচ্ছে। রাজ্য সরকারের পুলিশ নাকি বিজেপি নেতৃত্বকে হেনস্তা করার জন্যই এমন পদক্ষেপ নিয়েছে।
ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা না অপমান?
একজন শিখ পুলিশ অফিসারকে লক্ষ্য করে চটি ছোড়া, কেবল আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্ন নয়, বরং এটি ধর্মীয় সংবেদনশীলতার বিষয় বলেই মনে করছেন বিশিষ্ট মহল। শিখ সম্প্রদায়ে পাগড়ি পরা ও সম্মানের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে একজন শিখ অফিসারের প্রতি এমন আচরণ অনেকেই ‘গভীর অবমাননা’ বলে মনে করছেন।
কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি বলছেন, “ধর্মীয় বা জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে কোনও অফিসারকে অসম্মান করা শুধু শিষ্টাচারবিরুদ্ধই নয়, সাংবিধানিক ভাবেও প্রশ্নের।”
FIR দায়ের, তদন্তে পুলিশ
কলকাতা পুলিশের তরফে ইতিমধ্যেই ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে বলে খবর।
পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ ও ছবির বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দিও সংগ্রহ করা হচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও ইঙ্গিত প্রশাসনের।
রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে
তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়েছে রাজ্য জুড়ে। দলীয় মুখপাত্রের বক্তব্য, “এটাই বিজেপির সংস্কৃতি—পুলিশ, আইন, ধর্ম—সবকিছুকেই অপমান করা। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে ভাঙার চেষ্টা করছে ওরা।” অন্যদিকে, বিজেপির দাবি, “তৃণমূল আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের ভয়ে বিজেপির জনপ্রিয়তা রুখতে এ ধরনের নাটক সাজাচ্ছে।”
সুকান্ত মজুমদার বনাম শিখ অফিসার বিতর্ক ক্রমশ জটিল আকার নিচ্ছে। চটি ছোড়া নিছক এক ঘটনার চেয়ে বড় পরিসরে রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় স্পর্শকাতর ইস্যু হয়ে উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রীর তীব্র কটাক্ষ এবং পুলিশের FIR—সবমিলিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে আরও একবার আলোড়ন ছড়াল হাওয়াই চটি।
এখন দেখার, এই ঘটনার পর প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেয় এবং রাজনৈতিক তরজা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। আপাতত রাজ্যের চোখ সুকান্ত মজুমদার বনাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বৈরথের দিকে।