মণিপুরে গত তিন দিন ধরে লাগাতার ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি। ইম্ফল পূর্ব ও পশ্চিম জেলার একাধিক জনবসতিপূর্ণ এলাকা কার্যত ডুবে গিয়েছে জলের তলায়। ওয়াংখেই, হেইনগং, লামলং, খুরাই—এই অঞ্চলের রাস্তাঘাট, বাড়িঘর সব কিছুই এখন জলের নিচে।
উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়ল অসম রাইফেলস, প্রাণে বাঁচল শতাধিক শিশু ও বৃদ্ধ
এই সংকটময় মুহূর্তে অসম রাইফেলস দ্রুত মাঠে নামে। তাদের তৎপরতায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০০ জন নারী, শিশু ও প্রবীণ নাগরিককে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল শিশু এবং শারীরিকভাবে দুর্বল বৃদ্ধ মানুষ, যাঁরা নিজেরা পালাতে সক্ষম ছিলেন না।
ছোট নৌকো, দড়ি আর কাঁধে তুলে চলে উদ্ধার—হৃদয়স্পর্শী ছবি ভাইরাল
উদ্ধারকার্য চালানোর সময় সেনার হাতে ছিল মাত্র কয়েকটি রাবারের ডিঙি, দড়ি আর কাঁধের শক্তি। সেনা জওয়ানদের একাংশ শিশুদের পিঠে বয়ে নিয়ে এসে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেন। এমন হৃদয়বিদারক ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই মানুষের মধ্যে বাহবা কুড়িয়েছে অসম রাইফেলসের সাহসিকতা।
উদ্ধার হলেও অনেকেই অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি বৃদ্ধ-শিশুরা
বানের জল, ঠান্ডা ও দূষিত পরিবেশের কারণে বহু মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই জ্বর, সর্দি, পেটের রোগে আক্রান্ত। বেশ কিছু শিশু ও বৃদ্ধকে ইম্ফলের সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রোগীদের মধ্যে জলবাহিত সংক্রমণ দ্রুত ছড়াতে পারে, তাই নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
“বাড়ি চলে গিয়েছে, আমাদের কিছুই নেই”—ভেঙে পড়েছে বহু পরিবার
এক উদ্ধার হওয়া কিশোর বলেছে, “সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ঘরে কোমর জল। মা বলল কিছু না নিয়ে বেরিয়ে যেতে। এখন কোনও বাড়ি নেই, কোনও জামা-কাপড়ও নেই। শুধু প্রাণটা বেঁচে গেছে।” এই ধরনের দুঃখজনক অভিজ্ঞতা প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে এখন সাধারণ দৃশ্য।
প্রশাসনের তৎপরতা, খোলা হয়েছে ত্রাণ শিবির, সজাগ স্বাস্থ্যদপ্তর
মণিপুর সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন বেশ কয়েকটি অস্থায়ী ত্রাণ শিবির খুলেছে। সেখানে শুকনো খাবার, ওষুধ, কম্বল এবং প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তরের আশঙ্কা, বৃষ্টি চলবে আরও ৪৮ ঘণ্টা
আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, মণিপুরে আগামী দু’দিন ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। নদী ও খালের জলস্তর দ্রুত বাড়ছে, যা নিচু এলাকায় নতুন করে জল ঢোকার আশঙ্কা বাড়িয়েছে।
প্রশাসনের আবেদন: “আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান, গুজবে কান দেবেন না”
ইম্ফল পৌরসভা ও রাজ্য প্রশাসনের তরফে নাগরিকদের উদ্দেশ্যে বার্তা দেওয়া হয়েছে—যাঁরা প্লাবিত এলাকায় রয়েছেন তাঁরা যেন অবিলম্বে প্রশাসনের আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান। কোথাও জল ঢুকছে, এমন খবর পেলে দ্রুত হেল্পলাইন নম্বরে জানানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।