Indo-Canada relations : ‘অপারেশন সিঁদুর’ সফলভাবে শেষ হওয়ার পর ভারতীয় কূটনীতি যেন নতুন গতি পেয়েছে। আর ঠিক সেই সময়েই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তিন দেশব্যাপী বিদেশ সফর ঘিরে জল্পনার পারদ চড়ছে। কানাডা, সাইপ্রাস এবং ক্রোয়েশিয়া—এই তিনটি দেশকে কেন্দ্র করে যে সফরসূচি তৈরি হয়েছে, তা শুধু প্রতীকী নয়, কৌশলগত দিক থেকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।
প্রথম গন্তব্য কানাডা: সম্পর্ক মেরামতের ইঙ্গিত?
কানাডা ও ভারতের সম্পর্ক বিগত কয়েক বছরে ছিল উত্তপ্ত। শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদ, খলিস্তান আন্দোলনের পুনরুজ্জীবন, ট্রুডোর বিবৃতি এবং কূটনৈতিক লড়াই—দু’দেশের সম্পর্ক এক সময় প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছিল। তবে এখন সময় বদলেছে। ট্রুডো সরকারের পতনের পর কানাডার সঙ্গে সম্পর্কের বরফ গলেছে বলে কূটনৈতিক মহলের ধারণা। আর সেই সূত্র ধরেই G7 সামিটে যোগ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর কানাডা সফর নিঃসন্দেহে একটি ‘পলিটিক্যাল স্টেটমেন্ট’। দিল্লির এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের কথায়, “এই সফর শুধু একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ নয়, এটি মূলত ভারত-কানাডা সম্পর্কের পুনর্গঠনের সূচনা।”
সাইপ্রাস ও ক্রোয়েশিয়া: ইউরোপে ভারতের দখলদারি বিস্তারের কৌশল?
সাইপ্রাস ও ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বরাবরই বন্ধুত্বপূর্ণ। কিন্তু মোদীর এই সফরে সেই সম্পর্ক আরও গভীর করার লক্ষ্য রয়েছে। সাইপ্রাস, যা ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপরাষ্ট্র, সেখানে ভারত চায় তার নৌ-কৌশলগত উপস্থিতি বাড়াতে। পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ভারতীয় আগ্রহ এই সফরের অন্যতম চাবিকাঠি। ক্রোয়েশিয়া, আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশ। ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা এবং পর্যটন ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগ গড়ে তোলার ব্যাপারে আলোচনা হবে বলে সূত্রের খবর।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে মোদী: নির্বাচনের পর প্রথম বিদেশ মঞ্চে উপস্থিতি
সম্প্রতি তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর এই প্রথম কোনও আন্তর্জাতিক সফরে যাচ্ছেন মোদী। ভারতীয় রাজনীতিতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ এক অভূতপূর্ব পদক্ষেপ হিসেবে দেখলেও, আন্তর্জাতিক মহলে মোদীর ‘রিটার্ন টু পাওয়ার’ ঘিরে কৌতূহলের অন্ত নেই। তাই কানাডা-সাইপ্রাস-ক্রোয়েশিয়া সফর আন্তর্জাতিক স্তরে তাঁর ‘কমান্ডিং লিডারশিপ’ ফের প্রদর্শনের অন্যতম সুযোগ।
কেন এই সফর তাৎপর্যপূর্ণ?
১. ভারতের কূটনৈতিক পুনর্গঠন: অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে একাধিক দেশ ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। এই সফর সেই সহমর্মিতাকে স্থায়ী রূপ দিতে পারে।
২. বাণিজ্য ও নিরাপত্তা: ইউরোপীয় দেশগুলির সঙ্গে যৌথ প্রতিরক্ষা এবং প্রযুক্তি উন্নয়ন চুক্তি হতে পারে।
৩. জিওপলিটিক্যাল মেসেজ: চীন ও রাশিয়ার বাড়বাড়ন্তের মধ্যেই মোদীর সফর আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ভারসাম্য রক্ষা করার কৌশল হিসেবেও ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।
তিন দেশের এই সফর মোদীর কূটনৈতিক স্ট্র্যাটেজির একটা বড় উদাহরণ হতে চলেছে। শুধু রাজনৈতিক সম্পর্ক মেরামতই নয়, বিশ্বরাজনীতির মঞ্চে ভারতের ‘গ্লোবাল প্লেয়ার’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ আরও জোরদার করাই এই সফরের মূল উদ্দেশ্য।