প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে সাক্ষাৎ হওয়ার কথা ছিল জি-৭ সম্মেলনের ফাঁকে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও, ট্রাম্পকে আকস্মিকভাবে আমেরিকায় ফিরে যেতে হয় জরুরি কারণে। ফলে সেই বৈঠক বাতিল হয় শেষ মুহূর্তে।
ফোনে প্রায় ৩৫ মিনিটের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা
বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রির কথায়, এই বৈঠক না হলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে উদ্যোগী হয়ে মোদীকে ফোন করেন। দীর্ঘ প্রায় ৩৫ মিনিট কথা বলেন দুই রাষ্ট্রনেতা। আলোচনায় উঠে আসে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসবাদ ইস্যু থেকে শুরু করে দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত সহযোগিতা।
পহেলগাঁও হামলার পর এই প্রথম কথোপকথন
২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলার পর, ট্রাম্প মোদীকে ফোন করে সমবেদনা জানান এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ে সমর্থনের আশ্বাস দেন। সেই ঘটনার পর এটাই ছিল দুই নেতার প্রথম সরাসরি কথা।
আলোচনায় ‘অপারেশন সিন্দুর’
এই ফোনালাপের মূল বিষয় ছিল ভারতের সাম্প্রতিক ‘অপারেশন সিন্দুর’। যদিও এই অভিযানের বিষয়ে সরকারিভাবে অনেক কিছু প্রকাশ করা হয়নি, তবে এটিকে পহেলগাঁও হামলার পর ভারতের পাল্টা পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মোদী এই অভিযানের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন ট্রাম্পকে, এবং কীভাবে ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিচ্ছে তা তুলে ধরেন।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একযোগে লড়াইয়ের বার্তা
ফোনালাপে দুই নেতাই একমত হন, বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদ এখন আর শুধু একটি দেশের সমস্যা নয়, এটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তাই দুই দেশকেই আরও গভীরভাবে সহযোগিতা বাড়াতে হবে। ট্রাম্প জানান, ভারত যে ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তা যথার্থ এবং আমেরিকা ভারতের পাশে থাকবে।
কূটনৈতিক স্তরে মোদী-ট্রাম্প বন্ধুত্ব
যদিও ট্রাম্প এখন আর প্রেসিডেন্ট নন, কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তাঁর প্রভাব অস্বীকার করা যায় না। মোদী-ট্রাম্প সম্পর্ক বরাবরই দৃঢ় ছিল। সেই সম্পর্কের জোরেই জি-৭ সম্মেলনের ফাঁকে দু’জনের মুখোমুখি সাক্ষাৎ হওয়ার কথা ছিল। যদিও সেটি বাস্তবায়িত না হলেও, ফোনালাপে সেই ঘাটতি অনেকটাই পুষিয়ে নেওয়া গেল।
মোদী সরকারের কূটনৈতিক কৌশল স্পষ্ট
এই ফোনালাপ ফের প্রমাণ করে দিল, মোদী সরকার আন্তর্জাতিক স্তরে কূটনৈতিক সম্পর্কের দিক থেকে যথেষ্ট সক্রিয় ও কৌশলী। একদিকে জি-৭ সম্মেলন, অন্যদিকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অপারেশন—এই দুইয়ের মাঝে আন্তর্জাতিক মিত্রদের সমর্থন ধরে রাখা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা ভালভাবেই বোঝেন প্রধানমন্ত্রী।
এরপর কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ফোনালাপ ভবিষ্যতের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার একটি ভিত্তি তৈরি করে দিল। সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে আমেরিকার তরফ থেকে শক্ত অবস্থান ভারতে কূটনৈতিক সুবিধা এনে দেবে। পাশাপাশি, অপারেশন সিন্দুরের মতো অভিযানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ভারতের নিরাপত্তা নীতিকেও দৃঢ় করবে।
শেষ মুহূর্তে মোদী-ট্রাম্প বৈঠক বাতিল হলেও, ফোনের মাধ্যমে যে আলোচনা হয়েছে তা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং ‘অপারেশন সিন্দুর’ প্রসঙ্গ টেনে ভারতের পক্ষ থেকে শক্ত বার্তা দেওয়ার কূটনৈতিক সুযোগ মোদী হাতছাড়া করেননি। আগামী দিনে এই আলোচনার ফল কী হয়, সেটাই দেখার।