কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলার ঘটনার পর ৫৫ দিন কেটে গিয়েছে। অথচ, ঘটনায় জড়িত চার জঙ্গির এখনও কোনও খোঁজ নেই। এই পরিস্থিতিতেই কেন্দ্রকে নিশানা করে ফের একগুচ্ছ বিস্ফোরক প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন তৃণমূল সাংসদ এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার সকালে এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ এক দীর্ঘ পোস্ট করে অভিষেক কেন্দ্রের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর দাবি, ‘‘দেশের মাটি রক্তাক্ত হয়েছে, নিরীহ মানুষ খুন হয়েছেন, অথচ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জবাব নেই!’’
চার জঙ্গি কোথায়? কেন নেই কোনও তথ্য?
অভিষেকের প্রথম প্রশ্ন—৫৫ দিন কেটে গেলেও এখনও ওই চার জঙ্গির কোনও খোঁজ নেই কেন? সরকারের কাছে কি কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই? থাকলে তা জনগণের সামনে কেন প্রকাশ করা হচ্ছে না?
তিনি স্পষ্ট লিখেছেন, “হামলায় জড়িত ৪ জঙ্গির কোনও হদিশ নেই। ওরা বেঁচে আছে না মারা গেছে, তাও কেউ জানে না। তাহলে গোয়েন্দা সংস্থা কী করছে?”
সীমান্ত পেরিয়ে এল কীভাবে? প্রশ্ন সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে
তৃণমূল সাংসদের দ্বিতীয় প্রশ্ন আরও গুরুতর। তিনি জানতে চেয়েছেন, এই চার জঙ্গি কীভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করল? সীমান্তে নজরদারি কোথায় ছিল? বিগত এক দশকে বহুবার সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এবারও সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে অভিষেক লিখেছেন, “একটা আধুনিক দেশ হয়ে কীভাবে এত বড় নিরাপত্তা দুর্বলতা মেনে নেওয়া যায়?”
পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে ফের সুর চড়ালেন অভিষেক
চতুর্থ প্রশ্নে অভিষেক ফের তুলে এনেছেন পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর প্রসঙ্গ। কেন্দ্রের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, “পাক অধিকৃত কাশ্মীর পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি বারবার দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে তার কোনও রূপ নেই। সেটা কী শুধুই ভোটের সময়ের বুলি?” এর আগেও তিনি পিওকে নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন। এবার ফের সেই দাবিকেই সামনে আনলেন।
ট্রাম্পের দাবি নিয়ে কেন্দ্রের চুপচাপ অবস্থান কেন?
সম্প্রতি প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তাঁর মধ্যস্থতায় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি হয়েছিল। এই বিস্ফোরক দাবির পরেও কেন্দ্রীয় সরকার সম্পূর্ণ নীরব। এ নিয়েও তীব্র কটাক্ষ করেছেন অভিষেক। তাঁর প্রশ্ন, “ট্রাম্পের মতো একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধান এমন দাবি করলেন, আর ভারত সরকারের কোনও উত্তর নেই? কেন চুপ করে রয়েছে দিল্লি?”
সন্ত্রাস বিরোধী বিদেশনীতি নিয়ে প্রশ্ন
শেষ প্রশ্নে অভিষেক তুলে ধরেছেন দেশের বিদেশনীতি নিয়ে সন্দেহ। তিনি জানতে চেয়েছেন, বিদেশ সফরে গিয়ে ভারতীয় প্রতিনিধিদল কী আলোচনা করল সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে? অন্যান্য দেশ ভারতকে কী ধরনের সহায়তা দিচ্ছে এই যুদ্ধে?
অভিষেকের মতে, “আন্তর্জাতিক স্তরে সন্ত্রাস দমনে ভারতের ভূমিকা এখন প্রশ্নের মুখে। শুধু বিদেশ সফর করলেই হবে না, ফল কী হল তাও জানাতে হবে দেশবাসীকে।”
কেন্দ্রের নীরবতা নিয়ে জনমনে ক্ষোভ, দাবি স্পষ্ট জবাবের
এই প্রথম নয়, এর আগেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু এইবারের প্রশ্নগুলির ঘনঘটা এবং বিষয়বস্তুর বিস্তৃতি যেন আরও চাপ বাড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর।
যেখানে দেশের নিরাপত্তা, সীমান্ত নজরদারি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে একটিও স্পষ্ট জবাব না পাওয়া জনমনে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। অভিষেকের এই পোস্টে নেটদুনিয়ায় ইতিমধ্যেই প্রতিক্রিয়ার ঢল নেমেছে।
এখন দেখার, কেন্দ্র এই প্রশ্নগুলির কোনও উত্তর দেয় কি না, নাকি আবারও ‘নীরবতা’ই তাদের উত্তর হয়ে দাঁড়ায়।