পুরীর জগন্নাথ মন্দির বরাবরই ভারতের অন্যতম পবিত্র ধর্মস্থল। সেখানে রীতিনিয়মের কড়াকড়ি সর্বজনবিদিত। কিন্তু এবার সেই নিয়মই ভেঙে গেল প্রযুক্তির দাপটে। এক সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট ক্রিয়েটর ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহার করে মন্দিরের ভেতরের রীতিনীতির ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ায় ব্যাপক শোরগোল পড়েছে।
মন্দিরের ভেতরের ভিডিও ভাইরাল, তদন্তে নামল পুলিশ
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মন্দিরের ভিতরে পতাকা বাঁধার মতো সংবেদনশীল আচার-অনুষ্ঠান চলেছে। নিয়ম অনুযায়ী, এই দৃশ্য কখনওই ক্যামেরায় ধারণ করা বা প্রকাশ্যে আনা যায় না। অথচ সেই ভিডিও প্রকাশ করেছে ‘সুরজিৎ বিশ্বাস’ নামে এক বাঙালি কনটেন্ট ক্রিয়েটর, যার সোশ্যাল মিডিয়া পেজে পাওয়া গেছে পুরো ফুটেজটি। ভিডিওটি দেখে বোঝা যাচ্ছে, এটি ড্রোন ক্যামেরার সাহায্যে তোলা হয়েছে, যা মন্দিরের আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সিংহদ্বার থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে পুরী পুলিশ।
পুলিশের নজরে মন্দিরের ভিতরের কেউ?
পুরীর পুলিশ সুপার বিনীত আগরওয়াল জানিয়েছেন, কে এবং কবে এই ভিডিও তুলেছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। যদি প্রমাণ পাওয়া যায়, যে মন্দিরের কোনও সেবায়েত এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তবে তাঁর বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কারণ, মন্দিরের গোপন আচার নিয়ে কোনও রকম ফাঁস সরকারি নিয়মের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
নিরাপত্তা বাড়াতে আসছে ড্রোন বিরোধী প্রযুক্তি
ওড়িশার আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, তার জন্য মন্দির চত্বরে ড্রোন-বিরোধী প্রযুক্তি বসানো হবে। এই প্রযুক্তি ড্রোনকে মন্দিরের আকাশে ঢুকতেই দেবে না।
সেবায়েতদের দিকেও সন্দেহের আঙুল
এই ভিডিওতে একজন সেবায়েতকে পতাকা বাঁধতে দেখা গেছে—যা থেকেই সন্দেহ আরও গভীর হয়েছে। মন্দিরের প্রবীণ সেবায়েত কৃষ্ণ চন্দ্র খুন্তিয়া জানিয়েছেন, এই ভিডিওর জন্য মন্দিরের নিরাপত্তা ও পবিত্রতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তিনি দাবি করেছেন, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দোষীকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক। তাঁর মতে, “এখন যেভাবে প্রযুক্তির অপব্যবহার হচ্ছে, সেভাবে যদি কড়া শাস্তির বিধান না থাকে, তবে এই ধরনের সাহস আরও বাড়বে।”
ভক্তদের প্রতিক্রিয়া
শ্রীজগন্নাথের বহু ভক্ত এই ঘটনাকে ‘অপবিত্র’ এবং ‘রীতিবিরুদ্ধ’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের মতে, এমন আধ্যাত্মিক স্থানে প্রযুক্তির এমন প্রবেশ আসলে বিশ্বাসে আঘাত। অনেকেই সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের কাজ কেউ না করতে পারে, তার জন্য আরও কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
যেখানে ধর্ম আর আচার মিশে এক হয়েছে, সেখানে আধুনিক প্রযুক্তির এমন বেপরোয়া ব্যবহার কেবল আইনভঙ্গ নয়, তা ভক্তি ও বিশ্বাসেও আঘাত। পুরীর শ্রীমন্দিরে ড্রোন কাণ্ড নিয়ে এখন সারা দেশেই চলছে আলোচনা। তদন্তের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা দেশ—কে দায়ী, কী শাস্তি হয়, আর কতটা নিরাপদ থাকবে আমাদের ঐতিহ্যবাহী ধর্মস্থান?