শুক্রবার সকালটা আর পাঁচটা দিনের মতো ছিল না পুরুলিয়ার বলরামপুরের নামশোল এলাকায়। সদ্য ঘুম ভাঙা গ্রামবাসীদের চোখের সামনে আচমকাই নেমে এল মৃত্যুর বিভীষিকা। ১৮ নম্বর জাতীয় সড়কে মুহূর্তের মধ্যে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ঘটনা—একটি বরযাত্রী বোঝাই বোলেরো গাড়ি ও একটি ট্রেলারের মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত্যু হল ৯ জন যাত্রীর।
বিয়ে থেকে ফেরার পথেই অকালপ্রয়াণ
ঘটনাস্থল বলছে, মৃত ব্যক্তিরা একটি বিয়েবাড়ি থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। তাঁদের গাড়িটি—একটি বোলেরো পিকআপ—পুরুলিয়া দিক থেকে বলরামপুরের দিকে যাচ্ছিল। গাড়িটিতে মোট ৯ জন বরযাত্রী ছিলেন, সকলেই স্থানীয় এবং আত্মীয়। কিন্তু কারও কল্পনাতেই ছিল না যে, বিয়ের খুশি ফিরবে না আর তাদের সঙ্গে।
ট্রেলারের হঠাৎ আগমন এবং নির্মম ধাক্কা
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিপরীত দিক অর্থাৎ জামশেদপুর থেকে আসছিল একটি মালবোঝাই ট্রেলার। অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চলছিল ট্রেলারের চাকা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়েই মুখোমুখি ধাক্কা মারে বরযাত্রীদের বহনকারী বোলেরো গাড়িটিতে। সংঘর্ষ এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল যে, ঘটনাস্থলেই দুমড়ে-মুচড়ে যায় বোলেরোটি।
ঘটনাস্থলেই নিথর ৯ প্রাণ
স্থানীয় বাসিন্দারা ধাক্কা লাগার শব্দ শুনেই ছুটে আসেন। কিন্তু যা তাঁরা দেখতে পান, তা বর্ণনাতীত। গাড়ির ধাতব খাঁচার ভেতরে নিথর ৯টি দেহ। কারও মাথা ফেটে গিয়েছে, কেউ রক্তাক্ত অবস্থায় গাড়ির ভেতরে আটকে রয়েছেন। উদ্ধার করতে ছুটে আসেন পুলিশ, দমকল ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ।
শোকের ছায়া গ্রামে
মৃত ব্যক্তিদের বেশিরভাগই এক গ্রামের বাসিন্দা। ফলে গোটা এলাকাতেই নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বিয়ের আনন্দ মুহূর্তেই পরিণত হয়েছে অশ্রুর নদীতে। পরিবারের সদস্যরা ভেঙে পড়েছেন, কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিজনরা। বলরামপুর থানার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মৃতদের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে এবং দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত চলছে।
প্রশাসনের ভূমিকা ও প্রশ্নচিহ্ন
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবারও প্রশ্ন উঠেছে জাতীয় সড়কে যানবাহনের গতিবিধি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। ওই এলাকায় আগে থেকেই দুর্ঘটনার প্রবণতা ছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ট্রেলার গাড়িগুলির বেপরোয়া গতি ও ওভারটেকিং প্রবণতা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কড়া নজরদারি, স্পিড চেক ও নিয়মিত অভিযানের দাবি জোরাল হচ্ছে।
একটি বিয়ে, যে আনন্দময় মুহূর্ত হয়ে ওঠার কথা ছিল সারাজীবনের স্মৃতি—তা রূপ নিল মরণফাঁদে। ৯টি প্রাণের এমন মর্মান্তিক পরিণতি আমাদের আবারও সতর্ক করায় যে, নিরাপত্তা সচেতনতা আর ট্রাফিক নিয়মের গুরুত্ব কতটা অপরিহার্য। পুরুলিয়ার এই ঘটনা শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি এক সামাজিক প্রশ্ন—কত মৃত্যু হলে তবে আমরা সচেতন হব?