স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) বহুল আলোচিত ২০১৬ সালের দুর্নীতিপূর্ণ নিয়োগ বাতিল হওয়ার পর থেকেই অপেক্ষা ছিল নতুন বিজ্ঞপ্তির। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে অবশেষে ৩১ মে’র আগেই সেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করল পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন। তবে বিজ্ঞপ্তির মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন নজরে এসেছে, যা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছে রাজ্য জুড়ে।
অভিজ্ঞতার জন্য বাড়তি নম্বর, লেকচার ডেমোতেও মূল্যায়ন
নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চাকরিহারা শিক্ষকদের অভিজ্ঞতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এবার থেকে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার জন্য বরাদ্দ থাকছে ১০ নম্বর, এবং লেকচার ডেমো অর্থাৎ হাতে-কলমে পড়ানোর দক্ষতার জন্যও ১০ নম্বর বরাদ্দ করা হয়েছে।
অর্থাৎ যাঁরা আগে স্কুলে পড়িয়েছেন, তাঁদের প্র্যাকটিক্যাল জ্ঞানকেই এবার পরীক্ষার প্রধান মাপকাঠি হিসেবে ধরা হচ্ছে। আরও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, সরকার পোষিত স্কুলে যাঁদের অভিজ্ঞতা আছে, তাঁরা প্রতি বছরের জন্য ২ নম্বর করে অতিরিক্ত পাবেন। ফলে অভিজ্ঞদের জন্য বড়সড় সুবিধা বলেই মনে করা হচ্ছে।
বয়সেও ছাড়, বাড়তি সুযোগ ২০১৬-র চাকরিহারাদের
যদিও বিজ্ঞপ্তিতে নির্দিষ্ট করে সর্বোচ্চ বয়সসীমা লেখা হয়নি, তবে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ৩ এপ্রিলের রায়ের কথা। সেই অনুযায়ী, ২০১৬ সালের যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন এবং পরে হারিয়েছেন, তাঁরা বয়সের ক্ষেত্রে ছাড় পাবেন। অনুমান করা হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে যাঁদের বয়স ৪৯ পর্যন্ত হয়েছে, তাঁরাও এই পরীক্ষায় বসতে পারবেন। অর্থাৎ প্রায় ৯ বছর বয়সে ছাড় মিলছে চাকরিহারাদের জন্য।
অন্যদিকে, ন্যূনতম বয়সের ক্ষেত্রেও বদল এসেছে। এতদিন ২০ বছর বয়স হলেই পরীক্ষায় বসার অনুমতি ছিল, এবার তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২১ বছর। এতে কিছু নতুন প্রার্থী পরীক্ষায় বসতে পারবেন না।
বিক্ষোভ অব্যাহত, পরীক্ষার নিয়মেই ক্ষোভ চাকরিহারাদের
যদিও সরকারি তরফে বলা হচ্ছে চাকরিহারাদের কথা মাথায় রেখেই এই সুবিধাগুলি দেওয়া হচ্ছে, তবুও ‘চাকরিহারা যোগ্য অধিকার মঞ্চ’-এর সদস্যরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন—তাঁরা এই পরীক্ষায় বসবেন না। শুক্রবার শহরের রাস্তায় অর্ধনগ্ন মিছিল করে তাঁদের অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
মিছিলে অংশ নিয়ে বাঁকুড়ার চিকিৎসক রমেশ লাহিড়ী বলেন, “দু’মাসে গোটা সিলেবাস পড়ে এই পরীক্ষা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা স্কুলে পড়াই, আবার কলেজের পড়াশোনা করতে বলা হচ্ছে। এটা অসম্ভব।”
নতুন নিয়োগের সময়সূচি: কবে কী হবে?
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ রয়েছে নিয়োগের আবেদন শুরু, পরীক্ষা, প্যানেল প্রকাশ ও কাউন্সেলিং সংক্রান্ত বিস্তারিত সময়সূচি। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়া কতটা স্বচ্ছ ও নির্বিঘ্ন হবে, তা নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়েছে অনেকের মনে।
উল্লেখ্য, SSC-এর এই নতুন নিয়মে অভিজ্ঞ চাকরিহারাদের কিছুটা স্বস্তি মিললেও, পুরো প্রক্রিয়া ঘিরে অসন্তোষ এবং রাজনৈতিক চাপানউতোর এখনো বহাল। একদিকে যেখানে সরকার বলছে যোগ্যদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে চাকরি হারানো শিক্ষকদের একাংশ বলছেন—নতুন নিয়মে সুবিধা নয়, বরং বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।