খিদিরপুরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরদিন এলাকায় যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিল পুলিশের বিশাল বাহিনী। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, তাদের জন্য নতুন জায়গা ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। তবে এই বক্তব্যকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। এবার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
“মুখ্যমন্ত্রী সবার মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেননি”
খিদিরপুরে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী তো বলেছিলেন, তিনি বাংলার মেয়ে। কিন্তু কাল তাঁর কথাবার্তায় সেটা বোঝা যায়নি। তিনি তো হিন্দু-মুসলমান, বিজেপি, সিপিএম, তৃণমূল—সব নাগরিকের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া উচিত। তাহলে কাল কেন তাঁকে হাজারখানেক পুলিশ নিয়ে এসে বক্তব্য রাখতে হল? কেন ধমকাতে হল?” তাঁর কটাক্ষ, “মানুষের আস্থা উঠে গেছে, তাই তাঁকে আর কেউ নিজের মুখ্যমন্ত্রী বলে ভাবছেন না।”
“গরিব ব্যবসায়ীদের মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেননি তিনি”
বিরোধী দলনেতার সাফ অভিযোগ, “তিনি গরিব ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াননি। তাঁদের জন্য যে জায়গা ঠিক করা হয়েছে, সেই জায়গায় তাঁদের পাঠিয়ে দিয়ে এলাকা বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এই চক্রান্ত আমরা বুঝি।” তিনি আরও বলেন, “চিড়িয়াখানা বেচে দিয়েছেন। এখন খিদিরপুর এলাকাও বেচে দেবেন। এই এলাকাবাসীর জন্য কোনও সমাধান নেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। শুধু ধমক আর প্রশাসনিক কায়দায় চুপ করিয়ে রাখা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।”
“আগুন লাগার পর দমকল এলো তিন ঘণ্টা পরে!”
শুভেন্দুর বিস্ফোরক অভিযোগ, “রাত ১টার সময় আগুন লাগে, কিন্তু দমকল আসে ভোর ৪টেয়! এটা কি নিছক গাফিলতি, না পরিকল্পিত বিলম্ব?” তিনি বলেন, “সেটা মুখ্যমন্ত্রী জানেন। কারণ গোটা প্ল্যানিংয়ের পিছনে রাজ্য সরকারের ভূমিকা রয়েছে।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এটা কি কেবল দুর্ঘটনা, না কি এর পিছনে রয়েছে জমি দখলের চাল? ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তুলে দিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া—এই পরিকল্পনারই অংশ নয় তো এই অগ্নিকাণ্ড?”
“আমি জমি রক্ষার আন্দোলনে ডক্টরেট পেয়েছি!”
শেষে শুভেন্দু অধিকারীর হুঁশিয়ারি, “আপনাদের বলছি, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। জমি রক্ষার আন্দোলনে আমি ডক্টরেট করেছি। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের মানুষ জানে, আমি কীভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াই।” তিনি ব্যবসায়ীদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, “রাজ্য সরকার যদি জোর করে উচ্ছেদ করতে আসে, আমরা মাঠে নামব। এটা শুধু রাজনৈতিক লড়াই নয়, এটা অস্তিত্বের লড়াই।”
রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়ছে
এই ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তেজনা যে আরও তীব্র হবে, তা এখনই স্পষ্ট। মুখ্যমন্ত্রীর ‘নতুন জায়গা’ প্রস্তাবকে বিরোধীরা দেখছেন গোপন জমি চুক্তির প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে। অন্যদিকে, রাজ্য সরকার বলছে—স্বরক্ষা ও পুনর্বাসনই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। খিদিরপুরের সাধারণ ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের এখন চাওয়া, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে দ্রুত ও স্থায়ী সমাধান। তবে আদৌ তা হবে কি না, তা সময়ই বলবে।