যমুনা নদীতে স্নান করতে গিয়ে মৃত্যু হল ছয় কিশোরীর। উত্তরপ্রদেশের আগ্রা জেলার সিকান্দ্রা থানার অন্তর্গত বায়পুর গ্রামে মঙ্গলবার সকালে ঘটে গেল এই হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায়, সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ গ্রামের এক দল কিশোরী নদীতে স্নান করতে নামে। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্রোতে তলিয়ে যেতে শুরু করে তারা। চিৎকার, আর্তনাদ—সব মিলিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে।
যমুনার আচমকাই রূপ বদল
প্রতিদিনের মতোই ওই কিশোরীরা বন্ধুদের সঙ্গে স্নান করতে গিয়েছিল। তাদের বয়স ১১ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। কেউ স্কুলে পড়ত, কেউবা বাড়ির কাজে হাত লাগাত। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, নদীর এক পাশ দেখতে শান্ত হলেও মাঝপথে প্রবল স্রোত ছিল। আচমকা জলের টানে একে একে ছয়জন তলিয়ে যায়। সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজন কোনও মতে দৌড়ে গিয়ে খবর দেয় গ্রামে।
উদ্ধার অভিযান: একে একে উঠছে দেহ
খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। নামানো হয় প্রশিক্ষিত ডুবুরি দল। এক এক করে মৃতদেহগুলো ভেসে ওঠে জলের ওপরে। পুলিশ জানিয়েছে, সব মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে দুপুর ১টার মধ্যে। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, অতিরিক্ত স্রোত ও পানির গভীরতার কারণেই ঘটে এই দুর্ঘটনা।
শোকের ছায়া বায়পুর গ্রামে, কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবার
ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই গোটা গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। নিহত কিশোরীদের বাড়িগুলিতে কান্নার রোল। একজন মা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন, আরেকজন চিৎকার করে বলছেন, “আমার মেয়েটা তো সাঁতার জানত!” চারপাশে শুধু কান্না আর হাহাকার। একসঙ্গে ছয়টি কিশোরীকে হারিয়ে পুরো গ্রাম যেন নিস্তব্ধ।
উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্তারাও ঘটনাস্থলে
ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান আগ্রা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা। এলাকায় বাড়ানো হয়েছে পুলিশি নিরাপত্তা। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, মৃতদের পরিবারকে সরকারিভাবে সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। পাশাপাশি, নদী সংলগ্ন এলাকাগুলিতে নিরাপত্তার দিকটা জোরদার করার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন
এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনিক গাফিলতি নিয়েও। কেন নদীর বিপজ্জনক অংশে কোনও সতর্কতামূলক বোর্ড ছিল না? কেন স্থানীয়দের জানানো হয়নি স্রোতের তীব্রতা সম্পর্কে? প্রতিবছর গরমকালে এমন ঘটনা ঘটে, তবুও কার্যকরী পদক্ষেপ চোখে পড়ে না বলে অভিযোগ তুলছেন স্থানীয়রা।
এক মর্মান্তিক দিনের সাক্ষী থাকল আগ্রার বায়পুর গ্রাম। বন্ধুর সঙ্গে স্নান করতে গিয়ে মৃত্যু কোলে ঢলে পড়ল ছয়টি কিশোরী। একসঙ্গে হারিয়ে গেল ছয়টি প্রাণ, ছয়টি পরিবারে নেমে এল অন্ধকার। এই ঘটনা শুধুই একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং প্রশ্ন তোলে আমাদের সচেতনতা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক তৎপরতা নিয়ে।