Travel Guide : সময় বদলেছে। এখন বয়স্কদের জীবন মানে শুধুই অবসরের অলসতা নয়, বরং নতুন করে বাঁচার শুরু। অনেকেই এখন একা একা বেরিয়ে পড়েন ভ্রমণে। তবে এমন অনেক সন্তানও আছেন, যারা বাবা-মাকে একা ছাড়তে চান না। তাই নিজেরা সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন দূরে কোথাও। তবে এমন সফরের আগে বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখা ভীষণ জরুরি।
সময় নিয়ে ঘোরাঘুরি পরিকল্পনা করুন
বয়স্কদের শরীর আগের মতো সাড়া দেয় না, তাই খুব বেশি ব্যস্ত, তাড়াহুড়োর ট্রিপ থেকে বিরত থাকাই ভাল। কম সময়ের মধ্যে বেশি কিছু ঘুরে দেখার পরিকল্পনা করলে শারীরিক চাপ বেড়ে যেতে পারে। সে কারণে দিনপ্রতি কম দূরত্বের সফর, মাঝেমাঝে বিশ্রামের সময়, এবং হালকা হাঁটার রুটিন রাখলে ভ্রমণ আনন্দদায়ক হবে।
ট্র্যাভেল ইনস্যুরেন্স: ঝুঁকি কমানোর বুদ্ধিমত্তা
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। দূরে বেড়াতে গিয়ে হঠাৎ শরীর খারাপ হয়ে গেলে যেন চিকিৎসার ব্যবস্থা তৎক্ষণাৎ করা যায়, তাই ভালো একটি ট্র্যাভেল ইনস্যুরেন্স করিয়ে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও বিমা থাকলে সফর বাতিল হলেও কিছু ক্ষতিপূরণ পাওয়া যেতে পারে, যা মনস্তাত্ত্বিক স্বস্তিও দেয়।
মেডিক্যাল টেস্ট এবং চিকিৎসকের পরামর্শ
ভ্রমণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে একবার চেক-আপ করিয়ে নেওয়া উচিত। যদি কোনও ক্রনিক সমস্যা থাকে যেমন—ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হাঁপানি, তাহলে সেই অনুযায়ী ওষুধপত্র সঙ্গে নেওয়া প্রয়োজন। চিকিৎসককে দিয়ে ওষুধের একটা তালিকা বানিয়ে নিন এবং অন্তত ৫-৭ দিনের অতিরিক্ত ওষুধ সঙ্গে রাখুন যাতে জরুরিতে কাজে লাগে।
ব্যাগ গোছানোর সময় সচেতন হোন
বয়স্কদের ব্যাগ হালকা রাখতে হবে। অত্যাবশ্যকীয় জিনিস—যেমন ওষুধ, টিস্যু, হালকা খাবার, জলের বোতল, ছাতা, একটি ছোট তোয়ালে ইত্যাদি হাতের কাছে রাখার মতো ব্যাগে রাখুন। যদি কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ হয়, তা যেন ভারী না হয়—এই বিষয়টি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
থাকার জায়গা ও পরিবহন নিয়ে বাড়তি সতর্কতা
হোটেল বাছার সময় চেষ্টা করুন যেন সেখানে লিফট বা নিচের তলার ঘরের ব্যবস্থা থাকে। বেশি সিঁড়ি উঠতে হলে কষ্ট হতে পারে। একইভাবে, যানবাহন ভাড়া করলে তা যেন আরামদায়ক এবং দীর্ঘ সফরের উপযোগী হয়, সেটা আগে থেকেই নিশ্চিত করে নিন।
যোগাযোগ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
ট্রিপের সময় মা-বাবা কোথায় আছেন, কী করছেন—তা যেন পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও জানতে পারেন। ফোনে লোকেশন শেয়ারিং চালু রাখা যেতে পারে। যদি সম্ভব হয়, একটি মেডিকেল আইড কার্ড বা ব্রেসলেট পরিয়ে দিন যেখানে তাঁদের রক্তের গ্রুপ, ওষুধে অ্যালার্জি, ফোন নম্বর লেখা থাকবে।
কোথায় বেড়াবেন?
বয়স্কদের জন্য পাহাড়ের দুর্গম পথ বা অত্যন্ত ঠান্ডা/গরম পরিবেশ এড়িয়ে চলাই ভালো। সমুদ্রতট, প্রাকৃতিক উদ্যান, হেরিটেজ সাইট বা শান্ত ছোট শহর আদর্শ হতে পারে। যেমন—শান্তিনিকেতন, বিষ্ণুপুর, কৌশানি, উদয়পুর ইত্যাদি। বিদেশ যেতে চাইলে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম বা মালয়েশিয়া এমন কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে পরিকাঠামো খুবই সিনিয়র-ফ্রেন্ডলি।
উল্লেখ্য, বয়স্ক বাবা-মাকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছে খুবই প্রশংসনীয়, তবে তার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। একটা সামান্য ভুলেই বদলে যেতে পারে পুরো ট্রিপের অভিজ্ঞতা। তাই পরিকল্পনা করুন সচেতনভাবে, ভালোবাসায় ভরিয়ে দিন স্মৃতির পাতা। জীবন একটাই—তা যেন থেকে যায় মধুর স্মৃতির রঙে রঙিন।