সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (DA) নিয়ে দীর্ঘদিনের টানাপোড়েন চরমে পৌঁছেছে। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ৩০ জুনের মধ্যে বকেয়ার অন্তত ২৫ শতাংশ রাজ্য সরকারকে দিতে হবে। তার মানেই প্রায় ১০ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ কীভাবে জোগাড় করা হবে—সেই নিয়েই এখন সরগরম নবান্ন।
ঋণের পথেই ভরসা
সূত্র বলছে, রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাজার থেকে ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ঋণ তোলার। তার জন্য ঋণপত্র ইস্যুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অর্থ দপ্তরের দাবি, চলতি অর্থবর্ষে রাজ্য বাজেটে বাজার থেকে প্রায় ৮১ হাজার কোটি টাকা ঋণ তোলার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। তাই প্রথম কোয়ার্টারে কয়েক হাজার কোটি টাকা তোলা কোনও বড় সমস্যা নয়। এদিকে, গত বছরও রাজ্য সরকার বাজার থেকে ৮০ হাজার কোটির বেশি ঋণ তুলেছিল। তাই এই ‘ঋণ-কৌশল’ একেবারে নতুন নয়। তবু প্রশ্ন উঠছে, এর ভবিষ্যৎ প্রভাব কতটা ভয়াবহ হতে পারে?
‘টাকা দেব, কিন্তু হাতে নয়’—জিপিএফে চালাকি?
সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় হল, সরকার যাঁরা এখনও কর্মরত, তাঁদের বকেয়া সরাসরি হাতে না দিয়ে জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ডে (GPF) জমা দেওয়ার প্রস্তাব বিবেচনা করছে। এক অর্থে টাকা দেওয়া হলেও, তা আদতে সরকারের কাছেই থেকে যাবে। আর অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের প্রাপ্য পাঠানো হবে তাঁদের পেনশন অ্যাকাউন্টে। অর্থ দপ্তরের মতে, এর ফলে নগদ টাকার চাপ কিছুটা লাঘব হবে। কর্মচারী মহলে অবশ্য বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন, ‘পয়সা দিলে দেবে, না দিলে কোর্ট দেখবে। কিন্তু জিপিএফে চালাকি চলবে না।’
কত টাকা বকেয়া এখনও?
সরকারের নিজস্ব হিসাব অনুযায়ী—
-
সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ: ₹১১,৮৯০ কোটি
-
পেনশন প্রাপকদের প্রাপ্য: ₹১১,৬১১ কোটি
-
শিক্ষক, পুরসভা, পঞ্চায়েত ও অন্যান্য সংস্থার কর্মীদের প্রাপ্য: ₹১৮,৩৬৯ কোটি
সব মিলিয়ে অঙ্কটা ছাড়িয়ে গেছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। তার ২৫% এখনই পরিশোধের চাপ।
এখনই সরকারি বিজ্ঞপ্তি নয়
রাজ্য সরকার এখনো পর্যন্ত ডিএ মেটানো নিয়ে কোনও সরকারি নির্দেশিকা প্রকাশ করেনি। তবে অর্থ দপ্তরের অন্দরে চলছে টানা মিটিং, প্রস্তুতি ও ঋণ সংগ্রহের কার্যক্রম। নবান্ন সূত্র বলছে, ‘চাপ অনেক। সময় কম। কিন্তু আমাদের বিকল্প পথও নেই।’
মামলাকারীদের বক্তব্য
এই বিষয়ে মামলাকারী পক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টে ইতিমধ্যেই রাজ্য তাদের বক্তব্য লিখিত আকারে জমা দিয়েছে। তবে গরমের ছুটির জন্য শুনানি এখনও ওঠেনি। এখন দেখার, আদালত নতুন করে কী নির্দেশ দেয় এবং রাজ্য কতটা কার্যকরভাবে এই নির্দেশ মানতে পারে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ দিশা
এই পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। বিরোধীরা বলছে, ‘একদিকে ভোটে উন্নয়নের কথা, আর অন্যদিকে কর্মীদের বকেয়া মেটাতে সরকারকে ঋণ নিতে হচ্ছে!’ অনেকে প্রশ্ন তুলছেন—এই ঋণ ভবিষ্যতে রাজ্যের আর্থিক ভারসাম্যে কতটা প্রভাব ফেলবে?
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা না দিলে আদালত অবমাননার মুখে পড়তে পারে রাজ্য। তাই শেষ মুহূর্তের ‘ঋণ-ভরসা’ই এখন একমাত্র রাস্তা। তবে এই চাপে কতটা বিশ্বাসযোগ্যতা রাখতে পারবে সরকার—তা সময়ই বলবে। সরকারি কর্মচারীরা আপাতত অপেক্ষায়—কবে টাকা আসবে, আর আদৌ আসবে তো?