Tanushree Dutta : বলিউডে ‘আশিক বানায়া আপনে’ ছবির মাধ্যমে তনুশ্রী দত্ত যখন ঝড় তুলেছিলেন, তখন দর্শকরা মুগ্ধ। পর্দায় তাঁর উপস্থিতি, শরীরী ভাষা, আত্মবিশ্বাস—সব কিছুতেই ছিল এক অনন্য উন্মাদনা। কিন্তু সেই একই বলিউড যেন ধীরে ধীরে তাঁকে একা করে দিল। প্রশ্ন উঠতে শুরু করল—তনুশ্রী কোথায়? কেন নেই তিনি ছবিতে?
বলিউডের আলো থেকে ছায়ায়
২০০৫ থেকে ২০০৯—মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে একাধিক ছবিতে অভিনয় করে তনুশ্রী জায়গা করে নিয়েছিলেন দর্শকদের মনে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেল দৃশ্যপট। বলা ভালো, বদলে দেওয়া হল। এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন, কেরিয়ারের শুরুর পর থেকেই নানা টানাপোড়েনের মধ্যে পড়তে হয়েছে তাঁকে।
‘মাফিয়া’দের টার্গেট!
তনুশ্রীর কথায়, বলিউডের অভ্যন্তরে একপ্রকার গোপন ‘মাফিয়া নেটওয়ার্ক’ রয়েছে, যারা কার কেরিয়ার চলবে আর কার থেমে যাবে—তা নিয়ন্ত্রণ করে। তনুশ্রী সরাসরি অভিযোগ এনেছিলেন, তিনি এই নেটওয়ার্কের কোপে পড়েছেন। আর এই কোপ পড়ার প্রধান কারণ—#MeToo আন্দোলনের সময় তাঁর মুখ খোলা।
‘হর্ন ওকে প্লিজ’ বিতর্ক ও #MeToo
২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তনুশ্রী এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেন, ২০০৯ সালে ‘হর্ন ওকে প্লিজ’ ছবির শ্যুটিং চলাকালীন নানা পটেকর তাঁকে অশালীনভাবে স্পর্শ করেন। এতেই শুরু হয় বলিউডে ‘#MeToo’ ঝড়। তবে নানা পটেকর অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং শেষমেশ প্রমাণের অভাবে ক্লিনচিটও পান। কিন্তু এতে যিনি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেন, তিনি তনুশ্রী নিজেই। সিনেমা থেকে একরকম নির্বাসিত হয়ে পড়েন। বন্ধ হয়ে যায় অফার আসা, বন্ধ হয়ে যায় ক্যারিয়ার।
আমেরিকায় নির্বাসন ও প্রত্যাবর্তন
বলিউড থেকে বিদায় নিয়ে তনুশ্রী পাড়ি দেন আমেরিকায়। সেখানেই নিজেকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেন। ২০২০ সালে দেশে ফিরে আসেন তিনি। ফিরে এসে খোলাখুলিভাবে বলেন, তাঁর কেরিয়ার ধ্বংস করা হয়েছে। পোস্টে লেখেন, “ছবির অফার এলেও শেষ মুহূর্তে তা ভেস্তে যাচ্ছে, কেন বুঝতে পারছি।”
এখনও লড়াই করছেন তনুশ্রী
বলিউডের সঙ্গে ফের সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তনুশ্রী। সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয়, নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন। ভালো স্ক্রিপ্ট খুঁজছেন, অপেক্ষায় আছেন সঠিক সময়ের। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—এই ইন্ডাস্ট্রি তাঁকে কি ফের সেই জায়গায় ফিরিয়ে দেবে?
কেবল মিটু নয়, সমাজের চেহারাও ধরা পড়ে
তনুশ্রীর ঘটনা কেবল একটি ‘#MeToo’ অভিযোগ নয়, এটি আমাদের সমাজের এক কঠোর বাস্তব। যেখানে সাহস করে মুখ খুললে কণ্ঠস্বর চেপে দেওয়া হয়। যেখানে বিচারের আগে শাস্তি দিয়ে দেয় সমাজ। তাঁর এই যাত্রাপথ শুধু একজন অভিনেত্রীর কাহিনি নয়, বরং হাজার হাজার নারীর প্রতিচ্ছবি, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলে হারিয়ে যান অন্ধকারে।
উল্লেখ্য, তনুশ্রী দত্তর এই হারিয়ে যাওয়া, আবার লড়াই শুরু করা, নিজের কেরিয়ার পুনরুদ্ধারের চেষ্টা—সবই এক সাহসী নারীর লড়াই। বলিউড তাঁকে জায়গা দেবে কি না, সময় বলবে। তবে তাঁর সাহস ও স্পষ্টবাদিতা আগামী প্রজন্মের অনেককেই অনুপ্রাণিত করবে—এটাই সত্য।