World Religion Report : বিশ্বের ধর্মচিত্রে নীরব বিপ্লব! গত দশকে একক ভাবে সবথেকে দ্রুত বেড়েছে মুসলিম জনসংখ্যা। এমনটাই বলছে বিখ্যাত সমীক্ষাকারী সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টার। ২০১০ থেকে ২০২০—মাত্র ১০ বছরে প্রায় ৩৫ কোটি নতুন মুসলিম। যদি এই হার বজায় থাকে, তাহলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই মুসলিমরাই হয়ে উঠবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় গোষ্ঠী।
খ্রিস্টানদের সংখ্যা কতটা বেড়েছে?
২০২০ সাল পর্যন্ত খ্রিস্টানদের সংখ্যা বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু সেই বৃদ্ধি তুলনায় অনেকটাই ধীর। ২০১০-এ খ্রিস্টানদের সংখ্যা ছিল ২১৮ কোটি, যা ২০২০-এ পৌঁছেছে ২৩০ কোটিতে। অর্থাৎ, মাত্র ১২ কোটি বৃদ্ধি। বিশ্ব জনসংখ্যার হার অনুযায়ী, খ্রিস্টানরা আগের ৩০.৬ শতাংশ থেকে কমে এখন ২৮.৮ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।
মুসলিমদের অগ্রগতি বিস্ময়কর!
অন্যদিকে, মুসলিমদের সংখ্যা একই সময়ে বেড়েছে ৩৪.৭ কোটি, যা এক লাফে ২০০ কোটিতে পৌঁছে দিয়েছে এই ধর্মের অনুগামীদের। এখন বিশ্বের ২৫.৬ শতাংশ মানুষ মুসলিম। এই প্রবণতা বজায় থাকলে, ২০৪০-২০৫০ সালের মধ্যে মুসলিমরাই বিশ্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মে পরিণত হতে পারেন।
হিন্দুরা কোথায় দাঁড়িয়ে?
হিন্দুদের সংখ্যা বেড়েছে ঠিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারে। ২০১০-এ হিন্দু ছিলেন ১০৭.৪ কোটি, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২০ কোটি। বিশ্ব জনসংখ্যার হিসেবে হিন্দুরা এখনও ১৪.৯ শতাংশ, যা গত দশকে প্রায় অপরিবর্তিত থেকেছে। তবে উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়েও পড়েননি।
বৌদ্ধরা হারাচ্ছে সংখ্যা
একমাত্র ধর্মীয় গোষ্ঠী হিসেবে, গত দশকে সংখ্যায় কমেছে বৌদ্ধরা। ২০১০-এ যেখানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ছিল ৩৪ কোটির বেশি, ২০২০-তে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩২.৪ কোটিতে। শতাংশের হিসেবে ৫% থেকে কমে এখন ৪.১ শতাংশ বৌদ্ধ রয়েছে বিশ্বে।
ইহুদিরা এখনও সবচেয়ে ক্ষুদ্র ধর্মগোষ্ঠী
গত দশকে ইহুদিদের সংখ্যা সামান্য বেড়ে ১.৪৮ কোটি হয়েছে। শতাংশের হিসেবে তাদের স্থান প্রায় অপরিবর্তিত—মাত্র ০.২ শতাংশ।
ধর্মে আস্থা হারাচ্ছে অনেকে, বেড়েছে নাস্তিকদের সংখ্যা
সবচেয়ে চমকে দেওয়া তথ্য সম্ভবত এখানেই—২০১০ সালে যারা নিজেদের ধর্মহীন বা নাস্তিক বলে দাবি করেছিলেন, তাদের সংখ্যা ছিল ১১৩ কোটি। ২০২০ সালে তা বেড়ে পৌঁছেছে ১৪০ কোটিতে। অর্থাৎ বিশ্বের ১৮.২ শতাংশ মানুষ এখন কোনও ধর্মে বিশ্বাসী নন।
ধর্মের ভূগোল পাল্টাচ্ছে বিশ্বে
এই রিপোর্ট স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে, গোটা বিশ্বে ধর্মীয় ভারসাম্য ধীরে ধীরে পাল্টে যাচ্ছে। বিশেষ করে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বহু দেশেই জন্মহার কমে যাওয়ায় খ্রিস্টানদের সংখ্যা ধীরে কমছে, সেখানে দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিমদের জন্মহার অনেক বেশি।
পাশাপাশি অনেকেই ধর্ম থেকে সরে এসে নিরপেক্ষ অবস্থান নিচ্ছেন। ফলে আগামী কয়েক দশকে বিশ্বের ধর্মচিত্রে কী বদল আসবে, তার দিকেই তাকিয়ে গোটা বিশ্ব।