Jhargram : বাঙালির ঘুরতে যাওয়ার তাগিদ যেন রক্তে মিশে আছে। তবে হাতে যদি দু’একদিন সময় থাকে, আর পাহাড়-নদী-জঙ্গলের স্বাদ একসঙ্গে নিতে চান—তাহলে আপনার গন্তব্য হোক ঝাড়গ্রাম। কলকাতা থেকে মাত্র ১৭০ কিমি দূরে অবস্থিত এই জায়গাটি এখন মিনি পাহাড়ি গন্তব্য হয়ে উঠছে বহু ভ্রমণপ্রেমীর কাছে।
ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি: ইতিহাস আর প্রকৃতির যুগলবন্দি
ঝাড়গ্রামে এলে প্রথমেই চোখে পড়বে রাজবাড়ির চৌহদ্দি। অতীতের রাজকীয় সৌন্দর্য আজও প্রাণবন্ত। রাজবাড়ির প্রাঙ্গণে ফল, ফুল, বিরল গাছপালা ছাড়াও শুটিং লোকেশন হিসেবে রয়েছে বিপুল কদর। চাইলে এই রাজবাড়ির গেস্ট হাউসে থাকতে পারেন পর্যটকরা। চারপাশের শান্ত, সবুজ পরিবেশ যেন চোখে আরাম দেয়।
সাবিত্রী মন্দির ও বাঁদরভুলা সংগ্রহশালা
রাজবাড়ি থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে রয়েছে সাবিত্রী মন্দির। এখান থেকে কিছুটা এগোলে রয়েছে বাঁদরভুলা সংগ্রহশালা, যা স্থানীয় সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তুলে ধরে।
অরণ্য ঘেরা পথ: বেলপাহাড়ি থেকে গাডরাসিণী
ঝাড়গ্রাম শহর থেকে প্রায় ৩৭ কিমি দূরে বেলপাহাড়ি। এখানকার সৌন্দর্য এমনই যে, একবার দেখলে বারবার যেতে ইচ্ছে করবে। বেলপাহাড়ি থেকে কাঁকড়াঝোড় ২৫ কিমি দূরে, যেখানে বিস্তীর্ণ অরণ্য আপনাকে ডেকে নেবে নিস্তব্ধতায়। এখান থেকে আরও ১০ কিমি গেলেই পাবেন গাডরাসিণী পাহাড়। রংবেরঙের পরিযায়ী পাখির কলতান আর গাডরাসিণী আশ্রমে প্রকৃতির গভীরে হারিয়ে যেতে বাধ্য হবেন।
খ্যাঁদারানি: তিন পাহাড় ঘেরা রূপকথার হ্রদ
বেলপাহাড়ি থেকে প্রায় ১১ কিমি জঙ্গলপথ অতিক্রম করে পৌঁছনো যায় খ্যাঁদারানি হ্রদে। তিন দিক থেকে পাহাড় ঘেরা এই হ্রদ যেন স্বপ্নের মতোন সুন্দর। বৃষ্টির দিনে এখানে এসে যদি পাখির ঝাঁক দেখতে পান, তবে সেই অভিজ্ঞতা আপনার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্মৃতি হয়ে থাকবে।
চিল্কিগড়ের কনক দুর্গা মন্দির
ঝাড়গ্রাম থেকে ১৪ কিমি দূরে অবস্থিত চিল্কিগড়। এখানে রয়েছে কনক দুর্গা মন্দির, যা ডুলুং নদীর ধারে, গভীর জঙ্গলের মাঝে। একদিকে ধর্মীয় তীর্থ, অন্যদিকে অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণ।
কীভাবে যাবেন? কোথায় থাকবেন?
- রেলপথে: হাওড়া থেকে ঝাড়গ্রাম পৌঁছাতে লাগে সাড়ে তিন ঘণ্টা।
- সড়কপথে: জাতীয় সড়ক ধরে লোধাশুলি হয়ে পৌঁছানো যায়, সময় লাগবে প্রায় ৪ ঘণ্টা।
থাকার জন্য ঝাড়গ্রামে রয়েছে রাজবাড়ির কটেজ, হোম স্টে, সরকারি গেস্ট হাউস এবং বেসরকারি হোটেল। বিশেষত ছুটির দিনে গেলে আগাম বুকিং করে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
উল্লেখ্য, ঝাড়গ্রাম আর পাঁচটা ভ্রমণস্থান নয়—এটা হল প্রকৃতিকে কাছ থেকে ছুঁয়ে দেখার সুযোগ। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির দিনে, মন কেমন করা হাওয়ায় যদি একটু নির্জনে নিজেকে হারাতে চান—তাহলে এবার আপনার ডেস্টিনেশন হোক ঝাড়গ্রাম।