কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে আবারও জাঁকিয়ে বসেছে গরম। গত ক’দিন ধরে নিম্নচাপ ও মেঘলা আবহাওয়ার পর খানিকটা বৃষ্টি মিলেছিল বটে, তবে সে সব এখন অতীত। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দক্ষিণবঙ্গের আকাশে আপাতত বৃষ্টির কোনও নামগন্ধ নেই। বরং দিনে দিনে বাড়বে গরমের দাপট ও অস্বস্তি। সোমবার থেকেই তার ইঙ্গিত মিলেছে কলকাতার রাস্তায়। সকাল থেকেই সূর্য উঁকি দিতে শুরু করে। দুপুরের দিকে দাঁড়ায় তেতে ওঠা রোদের সামনে। এর সঙ্গে জোড়া হয়ে রয়েছে বাতাসে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প। ফলে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় শুরু হয়েছে হাঁসফাঁস পরিস্থিতি।
কতটা বাড়ল তাপমাত্রা?
আবহাওয়া দফতরের তথ্যে, কলকাতার এদিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের তুলনায় এক ডিগ্রি বেশি। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৭.৫ ডিগ্রি। Pতবে কেবল থার্মোমিটারের পাঠে শেষ নয়, গরমটা আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে মানুষের শরীরে। ‘রিয়েল ফিল’ বা বাস্তব অনুভূত তাপমাত্রা অনেকটাই বেশি, কারণ আর্দ্রতা বেড়েছে মারাত্মকভাবে।
জলীয় বাষ্পেই জনজীবনে ছেঁদো
আজকের দিনে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে ৮২ শতাংশের আশপাশে। এই উচ্চমাত্রার আর্দ্রতা শরীরে অতিরিক্ত ঘাম ও ক্লান্তি তৈরি করছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিও থেকে যাচ্ছে প্রবলভাবে। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সাধারণ মানুষকে।
জেলাভিত্তিক পরিস্থিতি
কলকাতা ও আশপাশ: সকাল থেকেই রোদচড়া, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে অস্বস্তি।
হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা: গরম ও আর্দ্রতার জোড়া খাঁড়া। দিনের শুরুতেই মাথা ঝিমঝিম করছে অনেকের।
পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর: এখনও পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা কম, শুষ্ক গরমের সঙ্গে দখিনা হাওয়ার ছোঁয়া।
নদিয়া ও বীরভূম: দুপুরের দিকে কিছুটা হালকা মেঘ দেখা গেলেও বৃষ্টি হয়নি, উলটে আর্দ্রতা আরও বাড়িয়েছে অস্বস্তি।
সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি
আবহাওয়াবিদ ও স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই ধরণের আবহাওয়ায় সাধারণ মানুষের উচিত—
- পর্যাপ্ত জলপান
- রোদে বেরোলে ছাতা বা হ্যাট ব্যবহার
- সুতির হালকা জামাকাপড় পরা
- শিশু ও বৃদ্ধদের যতটা সম্ভব ঘরের মধ্যে রাখা
বিশেষ সতর্কতা জারি হয়েছে রাস্তায় কাজ করা শ্রমিক, রিকশাচালক ও পুলিশ কর্মীদের জন্য।
সামনের দিনগুলিতে কী?
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এই সপ্তাহে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। বরং সপ্তাহের মাঝামাঝি তাপমাত্রা আরও ১ থেকে ২ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়তে পারে সপ্তাহান্তে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে কিছু অংশে মেঘলা আকাশ দেখা যেতে পারে, তবে বৃষ্টির পূর্বাভাস এখনও নিশ্চিত নয়।
উল্লেখ্য, গরমে রেহাই মেলেনি বাঙালির। জুনের শুরুতেই ফের ঘাম ঝরিয়ে বুঝিয়ে দিল, বর্ষা আসতে এখনও দেরি আছে। বৃষ্টির প্রতীক্ষায় শহর, কিন্তু আপাতত সেই আশায় ভরসা নেই। এখনই সতর্ক না হলে প্রাকৃতিক নয়, বিপদ ডেকে আনবে নিজেই।