বাঁকুড়ার জয়পুর থানার বেলেখালি এলাকায় বুধবার সকালে ঘটে গেল ভয়ঙ্কর এক ঘটনা। প্রতিদিনের মতোই বালি বোঝাই করতে গিয়েছিল কয়েকটি লরি। কিন্তু হঠাৎ নদীর জলস্তর বাড়তে শুরু করতেই পিছু হটার আগেই গিলে নিল দারকেশ্বর নদ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, মোট ছয়টি লরি নদের গর্ভে আটকে পড়ে। জল এত দ্রুত বাড়তে থাকে যে, লরিগুলির অর্ধেকটাই নিমেষে জলে ডুবে যায়। আতঙ্কে চালকরা এবং বালি ব্যবসায়ীরা প্রাণ হাতে নিয়ে নদীর পাড়ে ছুটে আসেন।
ধ্বংসের আশঙ্কা, ডুবে যেতে পারে গোটা লরি
জলস্তর বৃদ্ধির যে গতিবেগ তাতে স্থানীয়দের আশঙ্কা, লরিগুলি একেবারে সম্পূর্ণ তলিয়ে যেতে পারে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কতোটা হতে পারে তা নিয়ে সংশয়ে স্থানীয় প্রশাসনও। ঘটনার পর এলাকায় চরম চাঞ্চল্য ছড়ায়, এবং পরিবহণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষ কার্যত দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় ২১০ মিমি বৃষ্টি
এই বিপর্যয়ের মূল কারণ—প্রচণ্ড বর্ষণ। বাঁকুড়া জেলায় গত ৪৮ ঘণ্টায় ২১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, তার মধ্যে শেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৪২ মিলিমিটার। এর ফলে দারকেশ্বরের মতো জয়পন্ডা নদীর জলও ঢুকতে শুরু করেছে তালডাংরার একাধিক গ্রামে। গ্রামের পর গ্রাম এখন কার্যত জলবন্দি।
রাস্তায় কোমরসমান জল, বিচ্ছিন্ন জয়রামবাটির সংযোগ
দারকেশ্বরের পাশাপাশি বাঁকুড়ার আরও এক বিপদঘণ্টা বাজাচ্ছে আমোদর নদ। কোতুলপুর-আরামবাগ রাস্তায় এখন কোথাও কোমর, কোথাও গলা সমান জল। ফলে মা সারদার জন্মভূমি জয়রামবাটির সঙ্গে আর যোগাযোগ রইল না। একদিকে ধর্মীয় আবেগ, অন্যদিকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা—দুইয়ের চাপেই ছিন্নভিন্ন বাঁকুড়ার জনজীবন।
ত্রাণ শিবির খুলেছে প্রশাসন
পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন ইতিমধ্যেই খোলেছে পাঁচটি ত্রাণ শিবির। জয়পন্ডা নদীর পারবর্তী গ্রামগুলির মানুষজনকে সেই শিবিরে আনা হয়েছে। তবে এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আগামী দিনেও পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলেই আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা।
বর্ষা শুরুতেই বিপর্যয়ের বার্তা
বর্ষা শুরু হতেই বাঁকুড়ার এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা পশ্চিমবঙ্গের জন্য প্রথম সতর্কবার্তা। নদী অববাহিকায় বালি উত্তোলনের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সময় আরও বেশি সাবধানতা প্রয়োজন, বলছে বিশেষজ্ঞ মহল। এখন শুধু অপেক্ষা—বৃষ্টি থামবে কবে, আর দারকেশ্বরের গর্ভে আটকে থাকা লরিগুলিকে আদৌ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে কি না।