BJP : বুধবার সকাল। সাধারণ দিনের মতোই স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে মর্নিংওয়াকে বেরিয়েছিলেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। গন্তব্য ছিল দুর্গাপুর স্টিল টাউনশিপের চিত্রালয় ময়দান। হাঁটতে হাঁটতেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে হঠাৎই দলের দিকে বিস্ফোরক অভিযোগ ছুঁড়ে দেন তিনি। বলেন, “দলীয় কর্মীরা কেমন আছেন, সে খোঁজ আজ আর কেউ নেয় না। আমি গ্রামে ঘুরে খোঁজ নিই।”
অভ্যন্তরীণ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ?— নেতৃত্বের প্রতি হতাশা, না কি নিজস্ব অবস্থান জাহির?
দিলীপ ঘোষের এমন মন্তব্যকে অনেকেই দেখছেন বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও দলে তাঁর ‘অপ্রাসঙ্গিকতা’র ইঙ্গিত হিসেবে। বহুদিন ধরেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে থাকলেও রাজ্য রাজনীতিতে তাঁকে এখন প্রায় প্রান্তিক বলেই মনে করা হয়। সেই জায়গা থেকেই কি এই ক্ষোভ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের মন্তব্য আসলে চাপা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। হয়তো এ ভাবেই দলকে বার্তা দিতে চাইছেন তিনি—“আমিই এখনও মাঠে আছি, বাকিরা কেবল দফতরে বসে।”
হোয়াটসঅ্যাপ বিজেপি বনাম মাঠের কর্মী
দিলীপ ঘোষের কথায় উঠে এসেছে এক চিরাচরিত অভিযোগ—নেতৃত্ব সাধারণ কর্মীদের থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। রাজ্যজুড়ে বহু জায়গা থেকে অভিযোগ, অনেক জেলায় দলীয় সংগঠন কার্যত স্থবির। বহু কর্মীই আর কোনও যোগাযোগ পাচ্ছেন না নেতৃত্বের সঙ্গে। সেই প্রেক্ষিতেই হয়তো দিলীপ ঘোষের বার্তা—“কাজ শুধু ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপে হয় না, মাঠে নামতেই হবে।”
দুর্নীতির অভিযোগ, ব্যর্থতা ঢাকতে কৌশল?— রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের প্রশ্ন
এদিকে কিছু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের মতে, দিলীপ ঘোষ নিজেই বহু বিতর্কে জড়ানো নেতা। তাঁর সময়েও দলীয় পরিকাঠামোয় নানা সমস্যা ছিল। তাহলে এখন হঠাৎ এমন আত্মজাগরণ কেন? অনেকে বলছেন, হয়তো সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপির অনিশ্চিত ফলাফলকে মাথায় রেখেই দায় সরাতে চাইছেন তিনি। অথবা দলে নিজের অবস্থান পুনরুদ্ধার করতে চেষ্টা?
দিলীপের বার্তায় কী বার্তা রাজ্য নেতৃত্বের?
এই মন্তব্যের পর থেকেই রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও না এলেও, রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। তৃণমূল তো বটেই, অনেক বিজেপি কর্মীর মধ্যেও এই বক্তব্য ঘুরে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কারও মতে, দলের ভিতরে থাকা অনেকে এমনটাই মনে করেন, শুধু বলতে সাহস পান না।
অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির?
দিলীপ ঘোষ বিজেপির এমন এক মুখ, যাঁর সোজাসাপটা মন্তব্য বহুবার বিতর্ক তৈরি করেছে, কিন্তু গুরুত্বও পেয়েছে। এদিনের মন্তব্য নিছকই আবেগপ্রবণ অভিমানের বহিঃপ্রকাশ, না কি কোনও পরিকল্পিত বার্তা—তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এটুকু নিশ্চিত, এই মন্তব্যে রাজ্য বিজেপির অন্দরে নতুন করে ঢেউ তুলবে।