জামাইষষ্ঠী মানেই বাঙালির ঘরে ঘরে এক আলাদা রকমের সাজোসাজো রব। শাশুড়িদের আদরে, জামাইদের পাতে জমে উঠছে রাজকীয় ভোজ। তবে পাতে শুধু মাছ-মাংস বা পাঁচরকম তরকারি নয়—সবচেয়ে বেশি চমক থাকছে মিষ্টির ঘরেই! এই সময় শহর থেকে গ্রাম, সব জায়গার মিষ্টির দোকানে যেন হইচই লেগে গেছে। দোকানগুলোয় চলছে চূড়ান্ত ব্যস্ততা—কারণ জামাইষষ্ঠীর আগেই শেষ করতে হবে মিষ্টির পাহাড়প্রমাণ অর্ডার!
‘জলভরা’ আর ‘জামাই-স্পেশাল’ মিষ্টির জাদু
ঝাড়গ্রামের জনপ্রিয় মিষ্টির দোকানগুলোয় এ বছর নজর কেড়েছে দুই বিশেষ মিষ্টি—‘জলভরা’ এবং ‘জামাই-স্পেশাল সন্দেশ’। দোকানদাররা জানাচ্ছেন, এই সময়টায় এই দুটো নামেই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। জলভরার মধ্যে থাকছে রসগোল্লা-স্টাইলে সুরভিত রস, আর জামাই-স্পেশাল সন্দেশ তৈরি হচ্ছে কাজু, মালাই, আর চকোলেট ফ্লেভার মিশিয়ে।
মিষ্টিতে নতুনত্ব: চকো-কাজু, চকো-কোকোনাট, কাঁচা আমের ফিউশন!
শুধু ঐতিহ্য নয়, আধুনিকতার ছোঁয়াও এসেছে মিষ্টির দুনিয়ায়। চকো-কাজু, চকো-কোকোনাট, চকো-মালাই—এই সব অভিনব ফিউশন ফ্লেভারে তৈরি হচ্ছে সন্দেশ। এমনকি কাঁচা আমের ফ্লেভারও দেখা যাচ্ছে নতুন মিষ্টিতে, যা এই গরমকালে একটা টক-মিষ্টি স্বাদের অনুভূতি তৈরি করছে।এক দোকানদার বলেন, “আগে শুধু নলেন গুড় বা ছানার মিষ্টি হতো। এখন মানুষ একটু আলাদা স্বাদ খুঁজছে। তাই আমরাও নতুন কিছু করে দেখাচ্ছি।”
শাশুড়িদের উচ্ছ্বাসে জমজমাট বাজার
শুধু জামাই নয়, শাশুড়িরাও এই উৎসবে একেবারে প্রাণবন্ত। জামাইয়ের পছন্দের খাতিরে তাঁরা ঘুরে ঘুরে খুঁজে নিচ্ছেন সেরা মিষ্টি। অনেকেই আগেভাগে অর্ডার দিয়ে রেখেছেন দোকানে—কারণ ‘সেই’ বিশেষ সন্দেশটা যেন হাতছাড়া না হয়! জেলার প্রান্তিক এলাকাগুলোর দোকানেও সমান ব্যস্ততা। এক দোকানি বলেন, “এই সময়টা বছরে একবার আসে। তাই জামাইষষ্ঠীর বিক্রির ওপরই অনেক সময় পুরো মরশুমের লাভ নির্ভর করে।”
ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিষ্টি মেলবন্ধন
জামাইষষ্ঠী বাঙালির আত্মার উৎসব। আর সেই উৎসবে মিষ্টি ছাড়া যেন কিছুই জমে না। এই বছর ঝাড়গ্রামের দোকানগুলোর প্রস্তুতি এবং ক্রেতাদের উৎসাহ—দুটোই দেখার মতো। মিষ্টির তালিকায় যেমন আছে পুরনো দিনের জলভরা, তেমনই আছে আজকের দিনের চকো-সন্দেশ।উৎসবের খুশি আর মিষ্টির স্বাদ—দুটো মিলিয়ে এবারের জামাইষষ্ঠী হয়ে উঠছে আরও বেশি রঙিন, আরও বেশি মধুর।