বিয়ের ২৫ দিনের মাথায় এমন একটা দিন দেখতে হবে, হয়তো কল্পনাতেও ছিল না। বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ এবং তাঁর সদ্যবিবাহিতা স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদারের জীবনে এখন শুধুই হাহাকার, কান্না আর অপূর্ণতার ছায়া।
বিয়ের ২৫ দিনের মাথায় পুত্র শোক
রিঙ্কুর আগের পক্ষের একমাত্র সন্তান সৃঞ্জয় দাশগুপ্ত ছিলেন পেশায় এক জন আইটি কর্মী। সদ্যবিবাহিত মা ও তাঁর নতুন সংসারে মিশে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। অন্তত বাইরে থেকে সেটাই বোঝানোর চেষ্টা করতেন। কিন্তু অন্তরের ভিতরে কোথাও যেন রয়ে গিয়েছিল এক অস্থিরতা। সেই অস্থিরতারই কি শেষ পরিণতি এই অকালমৃত্যু?
মঙ্গলবার সকালে নিউটাউনের আবাসন থেকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় সৃঞ্জয়কে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ছেলে কে কাছে নিয়ে আসার আগেই সব শেষ
মায়ের চোখের জল যেন থামছেই না। তাঁর আক্ষেপ, “আমার বিয়ের পর থেকেই মনমরা থাকত। মুখে কিছু বলত না, কিন্তু বুঝতাম ঠিক নেই। আমি ডিসাইড করেছিলাম ওঁর (দিলীপের) সঙ্গে কথা বলব। ছেলেকে আমার কাছে নিয়ে আসব। কিন্তু সময় পেলাম না।”
‘পুত্রসুখ হল না, পুত্রশোক পেলাম’— বললেন দিলীপ
নিমতলা শ্মশানে ছেলের নিথর দেহের সামনে দাঁড়িয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, “এই বয়সে এমন মৃত্যু! বুঝতেই পারছি না কী হল! আমি ভাবিনি জীবনে এমন দিন আসবে। ওর মা সব কিছু দিয়েছে ছেলেকে, অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছে।”
কেমন ছিল সৃঞ্জয় ও দিলীপ ঘোষের সম্পর্ক?
সৃঞ্জয়ের সঙ্গে দিলীপের সম্পর্কও বেশ ভালোই ছিল বলে জানান তিনি। ম্যাচ দেখতে যাওয়া, গল্প করা— একসঙ্গে সময় কেটেছে। কিন্তু এই মৃত্যু যেন এক ঝটকায় সব কিছু ওলটপালট করে দিল।
‘বুঝেছিলাম, মন ভালো নেই!’— বলতে গিয়ে ভেঙে পড়ল রিঙ্কু
রিঙ্কুর কথায়, “একদিনও বাড়ির বাইরে থাকত না আমার ছেলে, এখন অন্যদের ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করেছিল। বুঝেছিলাম মন ভালো নেই, কিন্তু কিছু বলত না। ওর শুধু একটা স্বপ্ন ছিল— আমার সঙ্গে থাকবে, আবার একসঙ্গে থাকব।”
সোমবার রাতেও ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছিল তাঁর। বলেছিল, পরদিন অফিসের কাজে দুর্গাপুর যাবে। সেই রাতেই যে সব শেষ হয়ে যাবে, কে জানত?
একটা অপূর্ণতা, একটা না-পাওয়া, একটা দগদগে অভিমান— এই শোক সহজে যাবে না
এক দিকে নতুন দাম্পত্য, অন্য দিকে ছেলের হঠাৎ চলে যাওয়া। রিঙ্কুর জীবনে এই মুহূর্তে যেন সব কিছু কেমন অন্ধকার। ছেলের প্রতি মায়ের না-পাওয়া, তার গভীর যন্ত্রণা ছুঁয়ে গেল গোটা পরিবারকেই।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার অপেক্ষায় এখন পরিবার। কিন্তু তা-ও কি ফিরিয়ে দিতে পারবে এই মৃত্যুতে হারিয়ে যাওয়া শান্তি?