সরকারি হাসপাতালে ছানি কাটানোর জন্য গিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। ভেবেছিলেন, বিনামূল্যে মিলবে উন্নত চিকিৎসা। কিন্তু সেই চিকিৎসার পরেই অভিযোগ, চোখের আলোই হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। গার্ডেনরিচের একটি সরকারি হাসপাতালের এই ঘটনা সামনে আসতেই শুরু হয় তীব্র বিতর্ক। প্রশ্ন উঠে যায় সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার গুণমান নিয়ে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হয় মামলা। মামলায় অভিযোগকারীর দাবি, ছানি অপারেশনের পরে তাঁর চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এর দায় চিকিৎসক ও হাসপাতালের।
কী বলল হাইকোর্ট?
এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি অমৃতা সিনহা স্পষ্ট ভাষায় রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেন, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। শুধু অভিযোগ গ্রহণ নয়, আদালত জানতে চেয়েছে—
- ওই ছানি অপারেশন ক্যাম্পে কতজন রোগীর অস্ত্রোপচার হয়েছে?
- তাঁদের মধ্যে ক’জন অপারেশনের পরে সমস্যা অনুভব করেছেন?
- কেউ কি সরাসরি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন?
বিচারপতির নির্দেশ, এই সব প্রশ্নের উত্তর সমেত একটি প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি করে ১০ জুলাইয়ের মধ্যে হাইকোর্টে জমা দিতে হবে রাজ্য সরকারকে।
রাজ্যকে দিতে হবে রিপোর্ট
বিচারপতির মতে, সরকারি উদ্যোগে এই ধরনের ক্যাম্পে কোনও গাফিলতি থাকলে তা মারাত্মক। মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে কোনও রকম ছেলেখেলা বরদাস্ত করা হবে না। তাই গোটা ঘটনাকে হালকাভাবে না দেখে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে তৈরি রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরে অন্যান্য পক্ষরা (যেমন অভিযোগকারী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ) নিজেদের বক্তব্য আদালতের কাছে জানাতে পারবেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ২২ জুলাই।
আরও কেউ আক্রান্ত? আতঙ্কে পরিবাররা
এদিকে, অভিযোগ উঠতেই ক্যাম্পে যাঁরা ছানি অপারেশন করিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকে আতঙ্কে রয়েছেন। কারও চোখে জ্বালা, কারও আবার দেখার সমস্যা—এই ধরনের অভিজ্ঞতা নিয়ে হাসপাতালেও ভিড় করতে শুরু করেছেন অনেকে।
যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত সরাসরি কোনও গাফিলতির কথা স্বীকার করেনি। তারা বলেছে, ‘সঠিকভাবে সব প্রটোকল মেনেই অপারেশন হয়েছে। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।’
জনস্বাস্থ্যের প্রশ্নে জিরো টলারেন্স
হাইকোর্টের কড়া পর্যবেক্ষণ বার্তা দিয়েছে—জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা পরিষেবার ক্ষেত্রে কোনওরকম অবহেলা চলবে না। যেহেতু এটি একটি সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত স্বাস্থ্য শিবির, তাই এর জবাবদিহি করতে হবে সরকারকেই।
এই ঘটনা আরও একবার সামনে এনে দিল, রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ও তদারকি ব্যবস্থা কতটা জোরালো। যদি প্রাথমিক তদন্তে গাফিলতির প্রমাণ মেলে, তাহলে বড় ধরনের পদক্ষেপও নিতে পারে আদালত।
জনগণের ভরসার প্রশ্ন
একটি সরকারি হাসপাতাল, যেখানে গরিব মানুষেরা বিশ্বাস করে চিকিৎসা করাতে যান—সেখানে যদি এই ধরনের ঘটনা ঘটে, তাহলে সেই বিশ্বাস চূর্ণ হয়। তাই এই ঘটনা নিছক একটি মামলাই নয়, বরং বৃহত্তর সামাজিক ও নৈতিক প্রশ্নও তুলে দেয়। এখন দেখার, ১০ জুলাইয়ের রিপোর্টে কী উঠে আসে, এবং সেই অনুযায়ী আদালত কী সিদ্ধান্ত নেয়।
চোখের আলো হারানোর অভিযোগে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে হাইকোর্ট। এর পরিণতি কোন দিকে যায়, নজর থাকবে সেদিকেই।