Jadavpur University : শান্তিপূর্ণ বলে পরিচিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ইউনিয়ন রুমে বুধবার গভীর রাতে ঘটে গেল এক অভূতপূর্ব ঘটনা। ছাত্র সংগঠন ‘FETSU’-র দখলে থাকা ইউনিয়ন রুমে চরম ভাঙচুর চালানো হয়। চেয়ার-টেবিল ভাঙা, দেয়ালে কালি, পোস্টার ছেঁড়া – যেন পরিকল্পিত তাণ্ডব। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে এমন কাণ্ডে হতবাক ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে শিক্ষক মহল। বৃহস্পতিবার সকালবেলা ক্যাম্পাসে পা দিয়েই অনেকে চোখ কপালে তুলেছেন। কে বা কারা এই হামলা চালাল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
ইউনিয়ন রুমে তছনছ! চেয়ার টেবিল গুঁড়িয়ে দেওয়া, কাগজপত্র ছেঁড়া
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ভাঙচুরের সময়ে কেউ ক্যাম্পাসে ছিল না। সম্ভবত গভীর রাতে বা ভোরবেলা ঘটনা ঘটেছে। সকালে এসে দেখা যায়, FETSU-র অফিস ঘর সম্পূর্ণ লন্ডভন্ড। বই, ফাইল, কম্পিউটার সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। দেয়ালের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, কিছু জায়গায় আপত্তিকর শব্দও লেখা হয়েছে বলে অভিযোগ। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা প্রশ্নে উঠছে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসা না অভ্যন্তরীণ কোন্দল?
ঘটনার পর থেকেই ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে চাপা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। FETSU-র পক্ষ থেকে প্রথমেই অভিযোগ তোলা হয়, এটা পরিকল্পিত হামলা এবং এতে যুক্ত থাকতে পারে প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্র সংগঠনের কিছু সদস্য। তবে অন্য সংগঠনের দাবি, তারা এর সঙ্গে কোনওভাবেই যুক্ত নয়। বরং, এটি অভ্যন্তরীণ কোনও কোন্দলের ফলাফল হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতি জগতে এই মুহূর্তে একরকম থমথমে পরিবেশ।
FETSU-র প্রতিক্রিয়া: “গণতান্ত্রিক পরিসরে বর্বরতা”
FETSU-এর পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, “এই ঘটনা শুধু আমাদের উপর আঘাত নয়, বরং গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে কলঙ্কিত করল। আমরা এর প্রতিবাদে মৌন মিছিল ও প্রশাসনিক তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।” তারা দাবি করছে, এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী পরিকল্পনা করেই এই কাজ করেছে।
প্রশাসনের ভূমিকায় প্রশ্ন, তদন্তের আশ্বাস
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রার দুইজনেই এই ঘটনার নিন্দা করে জানান, তদন্ত শুরু হয়েছে এবং সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে পুলিশি তদন্তে যাওয়া হবে। একজন সিনিয়র প্রশাসনিক আধিকারিক জানান, “ছাত্র রাজনীতির জায়গা কখনওই সহিংসতা নয়। আমরা দোষীদের খুঁজে বের করব এবং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক, ‘নিজের ক্যাম্পাসেই অনিরাপদ’
যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশ এই ঘটনার পর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র বলেন, “এমনিতেই দেশের নানা জায়গায় ক্যাম্পাসে সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে। এখন আমাদের নিজের ক্যাম্পাসও সুরক্ষিত নয় মনে হচ্ছে।” অনেকে দাবি করছেন, রাতের নিরাপত্তা জোরদার করা হোক। পাশাপাশি ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে শান্তি ও সমঝোতা বজায় রাখারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
ছাত্র রাজনীতির পথে সহিংসতা কেন?
ছাত্র রাজনীতি বরাবরই গণতান্ত্রিক চর্চার অংশ। কিন্তু সেখানে যদি ভাঙচুর, দখলদারি আর প্রতিহিংসার পথকে জায়গা দেওয়া হয়, তাহলে শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যায়। যাদবপুরের এই ঘটনা যেন আবারও সেই প্রশ্ন তুলল – ছাত্র আন্দোলনের নামে কি তবে কেউ রাজনৈতিক ফায়দা তুলছে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্র সমাজ – দু’পক্ষকেই এখন কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে, না হলে এই তাণ্ডব অন্য কোনও শিক্ষাঙ্গনে ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগবে না।