রাজ্যে সরকারি বাস পরিষেবা নিয়ে বহুদিন ধরেই সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ জমছিল। বাসের সংখ্যা কম, যাত্রাপথে দীর্ঘ অপেক্ষা আর অনেক ক্ষেত্রেই বাতানুকূল পরিষেবার অভাব। দুর্গাপুজোর আগে সেই সমস্যার কিছুটা সমাধান করতে এবার বড়সড় সিদ্ধান্ত নিল পশ্চিমবঙ্গের পরিবহণ দফতর।
তিন ধরনের এসি বাস, লক্ষ্মীলাভে সরকার
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য পরিবহণ নিগমের জন্য মোট ২০০টি CNG চালিত এসি বাস কেনা হচ্ছে। এই বাসগুলির মধ্যে থাকবে তিন রকম—মিডি, সেমি ডিলাক্স এবং ডিলাক্স বাস।
১২ মিটার দৈর্ঘ্যের সেমি ডিলাক্স বাস কেনা হবে ১২০টি। প্রতিটির দাম ৬৫ লক্ষ টাকা। ডিলাক্স বাস আনা হবে ৫০টি, যার প্রতি ইউনিটের খরচ ৭০ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। এছাড়া ৯ মিটারের মিডি বাস কেনা হবে ৩০টি, যার প্রতিটির মূল্য ৪২ লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে এই প্রকল্পে বরাদ্দ হয়েছে প্রায় ১২৫ কোটি টাকা।
কবে আসছে বাস? কোন রুটে চলবে?
পরিকল্পনা মাফিক কাজ চললে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই নতুন বাসগুলি পরিবহণ নিগমের হাতে চলে আসবে। এই বাসগুলি চালানো হবে কলকাতা শহরের পাশাপাশি শহরতলির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রুটে।
সূত্র জানাচ্ছে, এসপ্ল্যানেড থেকে দমদম, উল্টোডাঙা থেকে এয়ারপোর্ট, বেলগাছিয়া থেকে সায়েন্স সিটি এবং উল্টোডাঙা থেকে যাদবপুর রুটে এই এসি সিএনজি বাসগুলি চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। কলকাতা এবং লাগোয়া শহরতলির কিছু রুটেও এই বাস পরিষেবা সম্প্রসারিত হবে বলে জানা গিয়েছে।
যাত্রীদের জন্য আরও আরামদায়ক ভ্রমণ
নতুন বাসগুলির যাত্রী সুবিধাও উল্লেখযোগ্য। আসন সংখ্যা থাকবে ৩০ থেকে ৪০-এর মধ্যে। ডিলাক্স বাসগুলিতে থাকবে পুশব্যাক সিট, যা দীর্ঘ যাত্রায় যাত্রীদের আরাম দেবে। এতে স্বাভাবিকভাবেই বাস যাত্রা আরও উপভোগ্য ও আরামদায়ক হবে।
পরিবেশ বান্ধব সিদ্ধান্ত
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিজেলের পরিবর্তে CNG-চালিত বাস চালানোর ফলে একদিকে যেমন সরকারের জ্বালানি বাবদ খরচ কমবে, অন্যদিকে পরিবেশও অনেকটা দূষণমুক্ত হবে। পরিবেশবিদদের মত, বড় শহরে সিএনজি চালিত গণপরিবহণ চালু হলে দূষণ অনেকটাই কমানো সম্ভব।
এই সিদ্ধান্তের ফলে আগামী দিনে কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দূষণের মাত্রা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কৌশলগত ভাবনায় রাজ্য সরকার
এই প্রকল্পকে ঘিরে স্পষ্ট যে, দুর্গাপুজোর আগে পরিবহণ পরিষেবা উন্নত করে রাজ্য সরকার জনমতকে কিছুটা নিজের দিকে টানতে চাইছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিবহণ খাতে এই বিনিয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পদক্ষেপ।
উল্লেখ্য, রাজ্যবাসীর স্বাচ্ছন্দ্য, পরিবেশ রক্ষা এবং গণপরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন—এই তিনটি লক্ষ্য পূরণে এই ২০০টি নতুন সিএনজি বাস হতে চলেছে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এখন দেখার বিষয়, সরকার ঘোষিত সময়ের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় কি না এবং সাধারণ মানুষ কতটা এর সুফল পায়।