Kolkata Fire : রবিবার রাত ঠিক ২টো ৫ মিনিট। যখন শহরের অধিকাংশ মানুষ গভীর ঘুমে, তখন হঠাৎ করেই খিদিরপুর বাজার চত্বর থেকে উঁকি দিতে শুরু করে লাল আগুনের শিখা। ধোঁয়ার কালো মেঘ ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। চিৎকারে, হাহাকারে ভেসে ওঠে ঘিঞ্জি বাজার। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে। বাজারের আঁকাবাঁকা পথ, ঠাসাঠাসি দোকান আর মজুত বিপুল দাহ্য পদার্থ—এই ত্র্যহস্পর্শে রাতের শহরে জেগে ওঠে এক বিধ্বংসী অধ্যায়।
২০টি দমকল ইঞ্জিনের যুদ্ধ, তবুও থামেনি আগুন
খবর পাওয়ার পরপরই দমকলের বিশাল বাহিনী পৌঁছয় ঘটনাস্থলে। রাতভর চেষ্টা চালিয়েও নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি আগুনকে। ২০টি ইঞ্জিন মিলেও যখন আগুন নেভাতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন বোঝা যায় পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ। সকাল গড়ালেও ‘পকেট ফায়ার’ রয়ে গিয়েছে একাধিক জায়গায়। ধোঁয়ার ঘনত্ব এতটাই ছিল যে, কোথায় আগুন আছে আর কোথায় নেই, তা বুঝতে গিয়েই অনেক সময় নষ্ট হয়েছে বলে দাবি ফায়ার অফিসারদের।
৪০০ দোকান ছাই, কোটি টাকার ক্ষতি
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি, অন্তত ৪০০টির বেশি দোকান পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়েছে। বহু দোকানে রাখা ছিল পোশাক, প্লাস্টিক, রঙ, দাহ্য কেমিক্যাল—এসবই মুহূর্তে আগুনের খাবারে পরিণত হয়। একজন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী বলেন, “জীবনের সব জমানো টাকা দিয়ে দোকানটা বানিয়েছিলাম। এখন শুধু ছাই। আমাদের কেউ কিছু বলে আগেই সরেনি। আগুন ছড়ানোর পরই আমরা বুঝতে পারি।”
ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা, দমকলের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়
এত বড় অগ্নিকাণ্ডের পরেও, মানুষের ক্ষোভ থামছে না। বহু ব্যবসায়ীর অভিযোগ, আগুন লাগার পর ঘণ্টাখানেক দেরি করে আসে দমকল। আর সেই ফাঁকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা বাজারে। একজন বলেন, “তিনটে বার ফোন করেছি। কেউ রিসিভই করেনি। তারপর আধঘণ্টা পর দমকল আসে। এত দেরিতে এসে কী উদ্ধার করবে?”
দমকল মন্ত্রীর ব্যাখ্যা, আগুন ছড়ানোর পেছনে ‘বেআইনি নির্মাণ’
ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। তিনি বলেন, “খুবই ঘিঞ্জি এলাকা। আগুন ছড়ানো আটকানো মুশকিল। অনেক দোকানই ঠিকঠাক ভাবে বানানো নয়। জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে, কুলিং শুরু হয়েছে। ফিরহাদ হাকিমও খোঁজ নিয়েছেন।”
আগুন লাগার আসল কারণ কী? তদন্তে নামল দমকল
এই আগুন কীভাবে লাগল, তার কোনও নিশ্চিত কারণ এখনো পাওয়া যায়নি। তবে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান করা হচ্ছে, কোনও শর্ট সার্কিট বা গ্যাস সিলিন্ডার লিক থেকেই শুরু হতে পারে আগুন। দমকল বিভাগ জানিয়েছে, বিশদ তদন্ত করা হবে। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। এক রাতের আগুনে শুধু কয়েকশো দোকান নয়, পুড়ে গিয়েছে বহু মানুষের ভবিষ্যৎ। কাঁদছেন মালিকেরা, নির্বাক স্থানীয় বাসিন্দারা। অনিশ্চয়তার মুখে হাজারও পরিবার। এই অগ্নিকাণ্ড মনে করিয়ে দিল, শহরের বাজারগুলোতে কতটা নিরাপত্তার অভাব রয়েছে, এবং প্রশাসনের কতটা নজরদারি প্রয়োজন।