মালদার ইংরেজবাজার শহরে একটি নির্মীয়মান বাড়ির মেঝে খুঁড়তেই উদ্ধার হল এক যুবকের টুকরো করা দেহ। খুনের অভিযোগ কাকিমার বিরুদ্ধে। প্রেম, টাকার লেনদেন আর ব্ল্যাকমেলের জটিল সমীকরণে নির্মমভাবে খুন হতে হল ৩৬ বছরের ঠিকাদার সাদ্দাম নাদাপকে।
নিখোঁজ ছিলেন ১৫ দিন, সন্দেহ ঘনীভূত হয় কাকিমাকে ঘিরে
চাঁচলের কোকলামারি এলাকার বাসিন্দা সাদ্দাম পেশায় একজন ঠিকাদার ও জমি ব্যবসায়ী ছিলেন। গত ১৮ মে রাতে অফিস থেকে বেরোনোর পর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। পরিবার সূত্রে জানা যায়, সেদিনই ব্যবসার ২৫ লক্ষ টাকা নিয়ে ফিরছিলেন তিনি। নিখোঁজের পরপরই পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মিসিং ডায়েরি করা হয়। সন্দেহের তীর ধীরে ধীরে ঘুরে যায় তাঁর কাকিমা মৌমিতা হাসানের দিকে। পরে সাদ্দামের স্ত্রী নাসরিন মৌমিতার নাম করে ফের অভিযোগ দায়ের করেন।
জেরায় স্বীকারোক্তি, নির্মীয়মান বাড়িতে পুঁতে রাখা হয় দেহ
তদন্তে গতি আসে ২৩ মে, মৌমিতাকে গ্রেফতার করার পর। পুলিশের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে মৌমিতা খুনের কথা স্বীকার করেন। জানান, দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন এলাকায় তাঁদের পৈতৃক বাড়ি নির্মাণ চলছিল। সেই বাড়িতেই ১৮ মে সাদ্দামকে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানেই এক ভাড়াটে খুনি (সুপারি কিলার) ও আরও কয়েকজন দুষ্কৃতীর সাহায্যে তাঁকে খুন করা হয়। এরপর দেহ কুপিয়ে টুকরো করা হয় এবং নির্মাণাধীন বাড়ির মেঝেতে পুঁতে ঢালাই করে দেওয়া হয়।
পরকীয়া সম্পর্ক, ব্ল্যাকমেল ও প্রাণনাশের হুমকি
মৌমিতার স্বামী সরকারি স্কুল শিক্ষক, পরিবারে রয়েছে নাবালক সন্তান। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মৌমিতা জানান, সাদ্দামের সঙ্গে তাঁর পাঁচ বছরের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সম্প্রতি সাদ্দাম তাঁকে ব্ল্যাকমেল করছিলেন। দাবি করছিলেন টাকা, এমনকি মৌমিতার স্বামী ও সন্তানের প্রাণনাশের হুমকিও দিচ্ছিলেন। সেই চাপ সামলাতে না পেরে খুনের পরিকল্পনা করেন তিনি।
পুলিশের অনুমান: টাকার লেনদেন ও সম্পর্কের জটিলতায় খুন
তদন্তে উঠে আসছে, শুধুমাত্র পরকীয়া নয়, সাদ্দামের সঙ্গে বড় অঙ্কের টাকার লেনদেনও ছিল। সেই আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে দ্বন্দ্ব তীব্র হয়। পুলিশের অনুমান, সেই কারণেই খুন। অভিযুক্ত মৌমিতা এখন পুলিশ হেফাজতে। আদালতে তোলা হলে মৌমিতা জানান, বারবার হুমকির মুখে পড়ে আত্মরক্ষা ও পরিবারের নিরাপত্তার জন্যই এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন তিনি।
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড কেবল মালদা নয়, গোটা রাজ্যের বুকে রোমাঞ্চ, হতভম্বতা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। ব্যক্তিগত সম্পর্কের জটিলতা কখন যে রক্তাক্ত পথে গড়াতে পারে, এই ঘটনা তার নির্মম প্রমাণ।