কলকাতার বিধানসভা কক্ষ তাপরেখা ছুঁতে চলেছে। বাংলায় কথা বললেই ‘বাংলাদেশি’ হিসেব করে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশে—এই অভিযোগের তীর ফেললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সরাসরি মহারাষ্ট্র সরকারে পাল্টা প্রশ্ন তুলে দিলেন, নাগরিকত্বের স্বীকৃতি ও ভাষার অধিকার নিতান্তই রাজ্যসভার বিষয় না হলে রাজ্য বিধানসভায় কেন এটি আনা হচ্ছে?
বিধানসভায় সরাসরি কটাক্ষ
সোমবার তিনি বলেন, “বাংলা বললেই বাংলাদেশি হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে। আধার – প্যান থাকা সত্ত্বেও মানুষদের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।” এভাবেই তিনি কেন্দ্রের ‘ডবল ইঞ্জিন’ প্রশাসনের সমালোচনা করেন। মমতার আক্ষেপ, শুধু বাংলা নয়, অসমেও একই চিত্র। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ‘পুশব্যাক’ নীতির কারণে পরিযায়ী শ্রমিকদের জমায়েত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
মহারাষ্ট্রের উদাহরণ
মহারাষ্ট্রে সম্প্রতি তিনজন পরিযায়ী শ্রমিককে আটক করে সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসাজনিত আদলে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয় পুলিশ। কিন্তু পরে তাদের পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের অনুরোধে ফেরিয়ে আনা হয়। এই ঘটনার পেছনে কোনো ন্যায়পরায়ণতা না দেখে মমতা বলেন, “এটা অনুমতি ছাড়া এবং তথ্য না জানিয়ে নেওয়া হয়”—রাষ্ট্রীয় স্বনিয়ন্ত্রণের সীমারেখা লঙ্ঘনের অভিযোগও তুলেছেন তিনি।
কেন্দ্রীয় বরাদ্দ নিয়েও প্রশ্ন
২০২১ থেকে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ১০০ দিনের কাজ বা গ্রামীণ রাস্তা প্রকল্পে বারবার বরাদ্দ পায়নি। মমতার দাবি, “কাজ করলে টাকা পাওয়া উচিত”—নিষ্ঠাহীন দাতা-গ্রহীতার নাটকের আড়ালে বিপুল আর্থিক অনিয়ম চলছে। রাজ্যের ‘পথশ্রী’ ও ‘মেধাশ্রী’ প্রকল্প ছড়িয়ে দিয়ে নিজস্ব অর্থে বহু কাঙ্ক্ষিত কাজ হাতে নিয়েছেন তিনি।
ধর্ম‑বর্ণের ভিত্তিতে ওবিসি সংরক্ষণ
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলায় ৩০ % মুসলিম ওবিসিতে রয়েছে। “আমরা একটা সংগঠিত তালিকা তৈরি করেছি, যাতে সংখ্যালঘু ও অগ্রেতর শ্রেণির সুরক্ষা পাওয়া যায়”—এবং সেই তালিকায় কিছু বদল ও অনাকাঙ্ক্ষিত সন্নিবেশও রয়েছে, যা নিয়ে তিনি কৌতূহলী হন।
ভাষা ও মানবাধিকারের প্রশ্ন
বিধানসভায় তিনি বলেন, “বাংলায় কথা বলাটা কি অপরাধ? দোষারোপ করেই আমাদের মানুষকে অন্য দেশে পাঠানোর মানে কী?” ভাষাভিত্তিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বললেন, কেন্দ্র এবং বিজেপি’র রাজ্যগুলোতে এমন প্রবণতা তীব্র হচ্ছে।
লজ্জা, ব্যঙ্গ, তীব্র প্রতিবাদ—এই তিন ভাবেই বিধানসভা কাঁপছে। বাংলাভাষার অধিকার, নাগরিকত্বের নিরাপত্তা ও রাজ্য‑কেন্দ্রের আর্থিক সম্পর্ক—সবেমাত্র উঠে এসেছে একত্রে। এরপর কী প্রসাবে যায় রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় শাসনের এই দ্বন্দ্ব?